চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৪ পিএম
ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কষ্টের কারণ হতে চায় না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির আছে। কিন্তু আগে ছাত্রলীগ বা অন্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যেভাবে ওপেন রাজনীতি করে আসছে সেটা আমরা এখনই করতে চাচ্ছি না। কারণ যতদিন না সাধারণ ছাত্রদের ভেতরে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে ততদিন এ কার্যক্রমগুলো সাধারণ ছাত্রদের অনেক বেশি কষ্ট দিবে। আমরা চাই না সাধারণ ছাত্রদের কষ্টের কোনো কারণ ছাত্রশিবির হোক। সেজন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা আমাদের একইনীতি অবলম্বন করছি।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোড এলাকায় সংগঠনির কার্যালয় আরইসরা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সময়ে ছাত্রদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতে সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ছাত্রশিবির চায় প্রথমত ছাত্রদের ভেতর থেকে এই ধরনের ভয়টা দূর করতে। বিগত ১৬ বছর ছাত্রলীগ যেমন ছাত্ররাজনীতির নামে দমনপীড়ন ও এক ধরনের স্বৈরাচারীর চেতনার চিন্তা ছাত্রদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ছাত্রশিবির চায় এই ধরনের আধিপত্যবাদী ছাত্ররাজনীতি যেন না থাকে। সকলেই যাতে রাজনীতির প্রতি আন্তরিক হয়। এজন্য ছাত্রশিবির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার সময় কাউকে বাধা দেয় না। ছাত্রশিবিরের ঘোষণা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণ ছাত্রদের। যে সাধারণ ছাত্র সে তার প্রতিষ্ঠানে যাবে, তার দায়িত্ব পালন করবে।
সভায় সমসাময়িক পরিস্থিতে সাংবাদিকদের কাছে পরামর্শ চান নগর শিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম। এসময় চট্টগ্রামে কর্মরত অর্ধশতাকি সাংবাদিক সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম কলেজ, হাজি মহসিন কলেজ ও পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের পরিস্থিতি নিয়েই বেশি আলাপ হয়। তারা ক্যাম্পাসগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শিবিরকে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক, মহসিন ও চট্টগ্রাম কলেজ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাধারণ ছাত্ররাই ক্যাম্পাসগুলো পরিচালনা করছে। এবং সাধারণ ছাত্রের ভেতর ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা আছেন। এককভাবে যে শিবির আধিপত্যবাদ কি সেটাতে আমরা বিশ্বাসী নয়। সম্প্রতি পলিটেকনিক গেট ইস্যুতে অনেক গণমাধ্যম ছাত্রশিবির কে দোষারোপ করেছেন। আমরা অনুরোধ করবো আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আসলে সেখানে কি ঘটেছিল। সাধারণ ছাত্রদের ভূমিকা যেটাই ছাত্রশিবির সেটাতেই সমর্থন দিবে। মূলত ওইখানে হল খোলাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হয়েছিল। সাংবাদিকরা ভালোভাবে তদন্ত করলে বিষয়গুলো আরো ভালো করে উঠে আসবে।’
সমাজে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বেশি উল্লেখ করে এসময় তিনি সচেতনতার সঙ্গে বিবেকবান হয়ে সংবাদ প্রচার করতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানান।
লিখিত বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী স্বৈরতন্ত্রের নির্মম পরিহাস থেকে রক্ষা পায়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানান অপরাধের নিরব সাক্ষী। পতিত স্বৈরচার জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করতে নানান ষড়যন্ত্রের পায়তারা করে আসছে। চট্টগ্রামেও ইতোমধ্যে কয়েক দফা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পতিত স্বৈরচারের দোসরদের তৎপর পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যনারে।
গঠনমূলক সমালোচনার দাবি রেখে তিনি বলেন‘যেহেতু এই সংগঠন মানুষ দ্বারা পরিচালিত তাই মাঝেমধ্যে ছোটখাট ত্রুটিবিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক এবং তা সংশোধনযোগ্যও বটে। তাই আমরা সর্বদা আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা ও সংশোধনীকে স্বাগত জানাই। এবং একাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্মানিত সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনেকরি। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে আরো বেশী গতিশীল করবে’
নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মুমিনুল হক, আফিস সম্পাদক খুররম মুরাদ, প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হাসান রিয়াদ ও প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আকাশ প্রমুখ।