মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৫৭ পিএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:২৯ এএম
প্রায় ৪০০ মানুষ টাকা গণনায় অংশ নেন। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। সারাদিন গণনা শেষে মিলেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩০৪ টাকা; যা এ যাবতকালে মসজিদটিতে দান হিসেবে জমা হওয়া সর্বোচ্চ টাকা। দানবাক্সে প্রচুর বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও জমা পড়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি, কিশোরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে মসজিদের ১১টি লোহার সিন্দুক খুলে ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। মিলেছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও।
মসজিদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় টাকা গণনার কাজ শুরু হয়। এতে অংশ নেন ব্যাংকের ৮০ কর্মচারীসহ প্রায় ৪০০ মানুষ।
টাকা গণনা শেষে সন্ধ্যার দিকে মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাবে রহমত জানান, টাকা গণনা শেষে তা রুপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট পাগলা মসজিদের ১০টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন তিন মাস ২৬ দিনে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া যায়। এ ছাড়া দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার অলংকার পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ পাগলা মসজিদে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
অন্যদিকে সেখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির এটির কাজ শুরু হবে। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ১২০ কোটি ধরা হলেও সময়ের কারণে এটি নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। আধুনিক এই মসজিদে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে বলে কমিটির সদস্যরা জানান।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী বলেন, সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে দান-খয়রাত করে থাকেন। সঠিক নিয়তে দান করলে মানুষের ইচ্ছা, মনের আশা ও মনোবাসনা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে; যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। কিছুদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’।