হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৩৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত
দেশের আমদানি-রপ্তানিতে গতি আনতে নিজ অর্থায়নে দুটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ বোর্ড সভায় নিজ অর্থায়নে ৫৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার এই সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে খুব দ্রুত জাহাজ দুটি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এ সম্পর্কে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক জানান, ‘বোর্ড সভায় নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কেনার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে সাড়ে সাতশ থেকে আটশ কোটি টাকায় ৫৫ থেকে ৬৬ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনা হবে। যত দ্রুত এ দুটি জাহাজ বহরে যুক্ত করা যায় আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
চীন থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে জাহাজ কেনার প্রকল্পটি থমকে থাকায় নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনার এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বিএসসি ধারাবাহিকভাবে লাভ করে যাচ্ছে। ওই লাভের ধারা অব্যাহত রাখতে বিএসসি নিজেদের বহরে নতুন নতুন জাহাজ যুক্ত করতে চায়। কিন্তু জি-টু-জি ভিত্তিতে জাহাজ কেনায় ধীরগতির কারণে এখন নিজেদের টাকায় জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় চীন থেকে চারটি জাহাজ কেনার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হওয়ার পর একই বছরের ১২ জুলাই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু অর্থায়ন জটিলতায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়নি।
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশমূলে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। প্রতিষ্ঠার চার মাসের মাথায় ১৯৭২ সালের ১০ জুন প্রতিষ্ঠানটির বহরে প্রথম যুক্ত করা হয় এমভি বাংলার দূত। এরপর এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৪৪টি জাহাজ প্রতিষ্ঠানটির বহরে যুক্ত করা হয়। কিন্তু বয়সের কারণে এই জাহাজগুলো স্ক্র্যাপ হয়ে যাওয়ায় কমতে থাকে বিএসসির বহর। এক পর্যায়ে জাহাজ কমে ২০১৮ সালে দুটিতে নেমে আসে। এরপর ২০১৯ সালে চীন থেকে ৬টি জাহাজ কেনার পর সেটি ৮টিতে পরিণত হয়। এরপর আবার কমতে থাকে জাহাজের সংখ্যা। গত মাসে দুটি জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় জাহাজের বহর এসে দাঁড়ায় ৫টিতে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসসির বহরে সাতটি জাহাজ থাকলেও অক্টোবর মাসের শুরুতে ৩৭ বছর পুরোনো বাংলার সৌরভ ও বাংলার জ্যোতি দুটি জাহাজে পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই দুটি জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিএসসি। এতে প্রতিষ্ঠানটির জাহাজ কমে এখন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫টিতে। কয়েক বছরের ব্যবধানে বিএসসির বহর আবার কমতে থাকায় নতুন জাহাজ যুক্ত করতে উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে চীন থেকে চারটি জাহাজ এবং কোরিয়া থেকে ৬টি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএসসি। কিন্তু অর্থায়ন নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ওই প্রকল্পগুলো থমকে থাকায় এখন নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ অক্টোবর বিএসসির সর্বশেষ বোর্ড সভায় দুটি জাহাজ কেনার বিষয়টি সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএসসি সূত্রে জানা যায়, নিজ অর্থায়নে দুটি জাহাজ কেনার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তিনটি অপশন রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলোÑ অর্ডার দিয়ে জাহাজ তৈরি করার। এটি বাস্তবায়নে দুই বছর থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। আরেকটি হলোÑ নির্মাণাধীন থাকা জাহাজ কেনা। এটির বাস্তবায়ন জাহাজগুলোর নির্মাণকাজ কোন পর্যায়ে আছে তার ওপর নির্ভর করবে। আর অন্যটি হলোÑ নৌবাণিজ্যে যুক্ত থাকা পাঁচ বছরের কমে কোনো জাহাজ কেনা। এই ধরনের জাহাজ পেলে সেগুলো কিনে দ্রুত বহরে যুক্ত করা যাবে। এতে কেনার পর জাহাজ দুটি সরাসরি এমপ্লয়মেন্টে চলে যাবে। তখন আয় বেড়ে যাবে বিএসসির।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জাহাজগুলো বিএসসির বহরে দ্রুত যুক্ত করতে চাই। এ জন্য ধারণ ক্ষমতার বিষয়টি ৫৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন রাখা হয়েছে। এই ধারণ ক্ষমতার মধ্যে অনুমোদিত কোনো ডিজাইনের জাহাজ পেলে সেটি আমরা কিনে নেব। রানিং ও নির্মাণাধীন জাহাজ না পেলে আমরা অর্ডার দিয়ে জাহাজ তৈরি করব। এর জন্য চীন ও জাপানের শিপইয়ার্ডগুলোতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। তিনটি অপশনের মধ্যে যেটি বেস্ট হবে আমরা সেটিই লুফে নেব।’