× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যে বাগানে হাতে পেড়ে খাওয়া যায় কমলা

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, শ্রীপুর (গাজীপুর)

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৩ এএম

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৮ পিএম

গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর গ্রামে কমলা বাগানে তরুণ উদ্যোক্তা সবুজ মিয়া। প্রবা ফটো

গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর গ্রামে কমলা বাগানে তরুণ উদ্যোক্তা সবুজ মিয়া। প্রবা ফটো

গাজীপুরের শ্রীপুরে চার যুবকের এক কমলা বাগান। বাগানের যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধুই কমলা আর কমলা। ঘন পাতার ফাঁকে কোথাও সবুজ, কোথাও হলুদ বর্ণের থোকা থোকা পাকা কমলা। উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের তিন একর কমলা বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা। এখানে এসে নিজ হাতে কমলা ছিঁড়ে খাওয়ার স্বাদ নেয় সবাই।

চার তরুণের মধ্যে মূল উদ্যোক্তা সবুজ মিয়া। দার্জিলিং জাতের একশ কমলাগাছে দারুণ ফলনে খুশি তিনি। বাগান থেকেই সরাসরি ক্রেতার কাছে কমলা বিক্রি করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চায়না জাতের হলুদ-সবুজ বর্ণের মেন্ডারিং কমলা থোকায় থোকায় ঝুলে গাছের ডালপালা নুইয়ে দিয়েছে। ৩০ টাকা প্রবেশমূল্যে সারিবদ্ধভাবে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে গাছ থেকে কমলা ছিঁড়ে খাচ্ছে। নিজ দেশে নিজ হাতে কমলা ছিঁড়ে খাওয়া স্বপ্নের মতো বলে জানিয়েছে অনেকে। 

সবুজ জানান, চাষের দুই বছরের মাথায় ফলন আসা শুরু হয়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম পরিশ্রমে কমলা চাষ লাভজনকও। ফলনের তৃতীয় বছর উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ে। এ বছর আরও প্রায় ৩৫ শতক জমিতে কমলার চারা রোপণ করেছেন তিনি। বাগান থেকে প্রতি কেজি দার্জিলিং জাতের কমলা বিক্রি করছেন তিনশ টাকায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চায়না মেন্ডারিং জাতের কমলা বিক্রি করার আশা করছেন। সারা দিন বাগানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। তারাই ক্রেতা। প্রতিটি গাছে গড়ে ৩০ কেজি কমলা হয়েছে। মৌসুমের এখনও বেশ কিছু দিন বাকি। আরও ফলনের আশা করছেন তিনি।

বাগান দেখতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কমলা বাগানের কথা শুনে ঘুরতে এসেছি। এত সুন্দর ফলন হয়েছে, আমি দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছি। বাড়ির আঙিনা ও ছাদে কমলার চাষ করলে ভবষ্যিতে আমদানি করে কমলা খেতে হবে না।’

উদ্যোক্তা সবুজ মিয়া বলেন, ‘শুরুতে চার বন্ধু মিলে বাগান করার পরিকল্পনা করি। এই জায়গায় বনজ আকাশমনির বাগান ছিল। চারজন উদ্যোগের পর নাটোরের কৃষিবিদি গোলাম মাওলাসহ অভিজ্ঞ কয়েকজনের কাছ থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে বাগান শুরু করা হয়। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে এর চেয়ে তিনগুণ বেশি ফলন হবে। গত বছর কিছু ফলন হয়েছিল। আকার, আকৃতি ও স্বাদ যাচাইয়ের জন্য ফলনের কিছু অংশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এবার সবই উন্মুক্ত।’

শুরুর কথা বলতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের একজন নেত্রকোণার ওয়ালী উল্লাহ বায়েজীদ বলেন, ‘আমরা দার্জিলিং ও মেন্ডারিং জাতের কমলা উৎপাদন করি। ২০০০ সালে ঝিনাইদহে কমলার উৎপান দেখেছি এবং তা থেকেই কমলা চাষে উদ্যোগী হই। প্রথম উৎপাদন আশাব্যঞ্জক ছিল না। ২০২৪ সালে দার্জিলিং ও চায়না মেন্ডারিং দুটোই ভালো উৎপাদন হয়েছে। গাজীপুরের ফাঁকা লাল মাটির জমি ফেলে না রেখে কৃষি অফিসের সহায়তা নিলে ওইসব জায়গায় কমলা উৎপাদন করা সম্ভব।’ 

দর্শনার্থী আনিসুর রহমান শামীম বলেন, ‘গাজীপুরের মাটিতে বিশেষ করে লাল মাটিতে কমলা হয়Ñ এটা অবাক করার মতো। যারা কমলা চাষে আগ্রহী নিশ্চিন্তে তারা গাজীপুরের মাটিতে কমলা চাষ করতে পারে।’

শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক আকন্দ বলেন, ‘বিশ্বে কমলা চাষের ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছর আগের। বিজ্ঞানীদের ধারণামতে, সর্বপ্রথম কমলার চাষ হয় চীনে। পরে এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এটির প্রচলন দেখা যায়। ধীরে ধীরে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখন দেশের ভেতরেই বিভিন্ন বাগানে কমলা ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এই বাগানে কমলা ঝুলে থাকার দৃশ্য আমাকে বিমোহিত করেছে। একসময় আমাদের দেশের উৎপাদিত কমলা দিয়ে কমলার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।’ 

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘শ্রীপুর কমলা চাষের জন্য উপযোগী। শ্রীপুরের সাতখামাইর এলাকায় দার্জিলিং কমলার সাইজ ও স্বাদ অসাধারণ। ১০ বছর আগেও ধারণা ছিল না আমরা আমাদের দেশে গাছ থেকে কমলা ছিঁড়ে খেতে পারব। উদ্যোক্তারা খুব ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ বেশ ভূমিকা রেখেছেন। আশা করি, দেশে আরও উদ্যোক্তা তৈরি হবে। আমাদের দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে কমলার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা