রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৭ এএম
রাজশাহীতে আলুর আবাদের ভরা মৌসুমে সার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। এক বস্তা সার সংগ্রহ করতেই চাষিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পেলেও বাধ্য হয়েই বস্তাপ্রতি ক্ষেত্র বিশেষে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা।
ডিলারদের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপে সারের বাজারে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিবারই ডিলাররা সারের অতিরিক্ত মূল্য নিতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ব্যবহার করেন।
কৃষকদের দেওয়া তথ্যমতে, আলুর ভালো ফলনের জন্য বিঘাপ্রতি আলু আবাদে দুই বস্তা পটাশ, এক বস্তা টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও এক বস্তা ডিএপি দানাদার সারের প্রয়োজন হয়। তবে চাষের জমিতে সেই সার ছিটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
জেলার ৯ উপজেলার আলুচাষি ও সার ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের বছরগুলোর তুলনায় বাজারে এখন আলুর দাম চড়া। এ কারণে গত বছর থেকে জেলা নির্ধারিত কৃষিজমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক নেতারা ডিলারদের বরাদ্দ থেকে অধিকাংশ সার নিয়ে নিচ্ছেন। আর সেই সার তারা বেশি দামে পছন্দের কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে নতুন বন্দোবস্ত পাওয়া এই রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কৃষক ও ডিলাররা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তবে এই পরিস্থিতির জন্য ডিলারদের দায়ী করছেন কৃষকরা। তাদের দাবি, সার সিন্ডিকেট টিকিয়ে রাখতে ও কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে ডিলাররা রাজনৈতিক দলের নেতাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। আর সেই সুযোগটাই ব্যবহার করেন নেতারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বাজার পরিস্থিতির কারণে লাভের আশায় কৃষকদের মাঝে আলু চাষের প্রবণতা বেড়েছে। ফলে অতিরিক্ত আরও সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমি আলু চাষের আওতায় আসতে পারে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই পরিমাণ জমি থেকে রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ।
এদিকে রাজশাহী জেলায় নভেম্বর মাসে ২ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন টিএসপি ও ৫ হাজার ৪৩২ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি মাসের সব সারই তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। ৫০ কেজির এক বস্তা ডিএপি সারের সরকারি মূল্য ১ হাজার ৫০ টাকা হলেও কৃষককে কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ৫০ কেজির এক বস্তা পটাশের সরকারি দাম ১ হাজার টাকা। কিন্তু চাষিদের কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। এক বস্তা টিএসপির সরকারি দাম ১ হাজার ২৫০ টাকা। কিন্তু কৃষকদের কিনতে গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। কৃষকদের প্রতি বস্তায় অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ক্ষেত্র বিশেষে যা ৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে তাদের।
রাজশাহী জেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত সারের ডিলার রয়েছেন ২১৯ জন, বিএডিসি অনুমোদিত ডিলারের সংখ্যা ১৩০ জন। বিসিআইসির এসব ডিলারের মাধ্যমে পটাশ, টিএসপি, ডিএপি ও ইউরিয়া সার বিতরণ করে আসছে। তবে বিএডিসির ডিলাররা ইউরিয়া সার বরাদ্দ পান না।
সরেজমিনে গত ২২ নভেম্বর তানোরের কামারগাঁও বাজারের সার ডিলার মৌসুমী ট্রেডার্সের সামনে গিয়ে দেখা যায় একদল মানুষ অপেক্ষা করছে। তবে কৃষকদের সার না দিয়ে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে ট্রলিতে করে সার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চাষিদের কাছে সার বিক্রি করা হচ্ছে না। এ সময় সার না পেয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরা ডিলারের কর্মচারী বিধান চন্দ্র দাসকে অবরুদ্ধ করেন। পরে ডিলার বিকাশ কুমার দাস সশরীরে উপস্থিত হয়ে কৃষকদের এক বস্তা করে সার দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনার পর ডিলার বিকাশ কুমার দাস সাংবাদিকদের বলেন, এবার চাহিদার তুলনায় সারের বরাদ্দ কিছুটা কম। সেই সঙ্গে প্রভাবশালী কেউ কেউ বেশি পরিমাণে সার নিতে চাপ দিচ্ছে। এ কারণে কেউ কেউ সার পাচ্ছে না বা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, চলতি আলু আবাদে চাষিদের চাহিদা অনুসারে সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও বিতরণে অনিয়মের খবর পেলে আমরা তা মনিটরিং করছি। বেশি দামে সার বিক্রি করলে এবং সেটা প্রমাণিত হলে ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।