আব্দুল্লাহ আল নোমান, আশুলিয়া (ঢাকা)
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪ এএম
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও নবীনগর এলাকার মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যান বা থ্রি-হুইলার। সম্প্রতি নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বলিভদ্র এলাকায়। প্রবা ফটো
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যান বা থ্রি-হুইলার। কিশোর ও অদক্ষ চালকের হাতে এসব তিন চাকার যান থাকায় ট্রাফিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না তারা। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ জীবিকার তাগিদে এসব অঞ্চলে বসবাস করে। এর মধ্যে অনেকেই মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। শুধু সাভার ও আশুলিয়ায়ই প্রায় ৫০ হাজার অটোরিকশা-ভ্যান রয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন রিকশা-ভ্যান শ্রমিক সংগঠনের।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সাভার ও আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে থ্রি-হুইলার। এ ছাড়া বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের অবস্থাও একই। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল রোধে চোখে পড়েনি পুলিশের তৎপরতাও।
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল করার এমন চিত্র শুধু ওইদিনের নয়, প্রতিদিনের। এতে একদিকে যানজট, অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনা। তারা জানান, আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেপরোয়া গতির একটি অটোরিকশা আঘাত করে একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ওই দুর্ঘটনায় আহত কামাল হোসেন বলেন, ‘সড়কে তিন চাকার অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার চলাচল নিষেধ। আমি ফাঁকা সড়কের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় উল্টো দিক থেকে একটি অটোরিকশা এসে সরাসরি আমার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়।’
এদিকে, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্বাধীনভাবে চলাচল করা এই থ্রি-হুইলার চালকদের নেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। এমন কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মহাসড়কে চলাচলের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানেন। অনেকে একটু বাড়তি ভাড়ার লোভে মহাসড়কে আসেন। অনেকে আবার যাত্রীর চাপের মুখে পড়ে আসতে বাধ্য হন।
এ ব্যাপারে জাকির হোসেন নামের এক থ্রি-হুইলার চালক বলেন, আমি জানি হাইওয়েতে গাড়ি চালানো নিষেধ। তবে রাতের বেলায় গাড়ি ধরে না, তাই এসেছি। আগে বেশি ধরত, এখন পুলিশে গাড়ি কম ধরে। ব্যাটারিচালিত এক ভ্যানচালক বলেন, ভাড়া পেয়েছি, তাই এসেছি। তবে আমি তেমন আসি না।’
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে অবৈধ এই অটোরিকশা বা ভ্যান চলাচলের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে বিভিন্ন রিকশা-ভ্যান শ্রমিক সংগঠন। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানা রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে মূল সড়কের পাশ দিয়ে আলাদা লেন চালু। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে, রাস্তায় আমাদের কোনো বাধা দেওয়া চলবে না। তৃতীয় দাবি হচ্ছে, আমাদের গাড়ির লাইসেন্স দিতে হবে।’
আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রিকশায় চলাচল করা আরজু শেখ বলেন, কাছে কোথাও যেতে হলে রিকশা ব্যবহার করি। কিন্তু মহাসড়কে তারা যেভাবে গাড়ি টানে, তাতে আসলে ঝুঁকি রয়েই যায়। এখন কী করব, স্বল্প দূরত্বের জন্য আসলে বাসে উঠতে ইচ্ছে করে না। তাই রিকশায় উঠতে হয়।
সাভার ইপিজেড এলাকায় প্রায়ই রিকশায় চলাচল করা পোশক শ্রমিক মীম আক্তার বলেন, ‘অটোরিকশায় চড়লে অনেক ভয়ে থাকতে হয়। কারণ অটোচালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না। গাড়িটা কত গতিতে চললে পেছনের গাড়ির কোনো সমস্যা হবে না, এটা তারা জানেই না। আবার অনেক সময় একটু জ্যাম দেখলেই ফুটপাতে তুলে দেয়। রাস্তা ভাঙা আছে নাকি তার দিকে খেয়াল না করেই ইচ্ছামতো টান দেয়। সব মিলিয়ে মনে ভয় নিয়েই অটোরিকশায় উঠতে হয়।’
এ ব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার ওসি সওগাতুল আলম বলেন, বর্তমানে জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের রেকারিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে মহাসড়কে অটোরিকশা বা থ্রি-হুইলারের চলাচল বাড়তে পারে। তবে আমাদের ই-প্রসিকিউশন ব্যবস্থা এখনও চালু রয়েছে। বর্তমানে শুধু ই-প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।