কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫০ পিএম
শিক্ষার্থী তাউসিফুল করিম রাফি।
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠানো নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীর পরিবার ও প্রতিবেশীরা বলছেন, যুবলীগ নেতা বাবাকে ঘরে না পেয়ে ২৬ নভেম্বর ভোরে ওই শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ওই শিক্ষার্থীকে অস্ত্র মামলায় আদালতে পাঠানো হয়। তবে পুলিশ বলছে, ভোরে রাস্তায় অভিযান চালিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়। যদিও পুলিশের করা মামলার দুই সাক্ষী পুলিশের বক্তব্যের ভিন্ন কথা বলেছেন।
ওই এই শিক্ষার্থীর নাম তাউসিফুল করিম রাফি। তার
বাবা হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং উপজেলা যুবলীগের
সদস্য রেজাউল করিম। তাদের বাড়ি হ্নীলার দরগাহ পাড়া এলাকার।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ।
টেকনাফ থানার
ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে এক
অভিযানে হ্নীলার দরগাহ পাড়ার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তার পর দুজন পালিয়ে
যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আটক করা হয় তাউসিফুল করিম রাফিকে। এ সময় তার ডান হাতে
থাকা একটি নীল রংঙের শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, ৪০
রাউন্ড নীল রংঙের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, শিক্ষার্থী রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে
জানায় তার বাবা রেজাউল করিমের অস্ত্র এটি। তার বাবা তাকে এটি পাশের বাসার নুরুল
আমিনের বাড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের দায়ের করা
মামলায় বাবাকে পলাতক আসামি করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত রাফিকে কারাগারের
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।
ওসি আরও বলেন, মুলত শিশুর রাফির বাবা রেজাউল করিম
চিহ্নিত সান্ত্রসী ও ইয়াবাকারবারের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসী কাজের জন্য
লাইসেন্সবিহীন এই অস্ত্র মজুদ করেছিল।
রাফির বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক
এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু পুত্রকে
অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলে খুবই মেধাবী। সে ২০২১ সালে হ্নীলা প্রি
ক্যাডেট স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে ড. গাজী কামরুল ইসলাম বৃত্তি লাভ করে। ২০২১
সালে চতুর্থ শ্রেণীতে হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি ও ২০২২ সালে ৫ম শ্রেণীতে জি এইফ এইচ
বৃত্তি পায়। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছেলে অংশ নিতে পারল না।
মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী
সুফাইদা আকতার ও মৌলভী জামাল হোসাইনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন রেজাউল করিম।
সুফাইদা আকতার বলেন, ‘ওই দিন মধ্যরাতে পুলিশ তার ঘরে
ঢুকে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে কিছু খুজতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার
আলমিরাতে অস্ত্র পেয়েছে বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়।’
মৌলভী জামাল হোসাইন জানান, ভোরে মসজিদের যাত্রা দেওয়ার
পথে পুলিশের ওসি তাকে দাঁড় করান। ওই সময় রেজাউলের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করতে
দেখেন। ওসি তাকে জানান, অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করেছে। এরপর এটি কাগজে স্বাক্ষর
নেন। এটা মামলার সাক্ষী কি না জানি না।
এদিকে স্কুলছাত্র তৌসিফুল করিম রাফিকে আটকের ঘটনায়
সব শ্রেণীর মানুষ সমালোচনা করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।