ফারহানুর রহমান, লালপুর (নাটোর)
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:০৮ পিএম
নাটোরের লালপুরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত দুই বছর যাবৎ প্রতারণা করে অন্যের টিসিবি পণ্য তুলে নিয়ে গেছে একটি প্রতারক চক্র। কার্ড দেওয়ার দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই জানিয়েছেন, শত শত পরিবারের রয়েছে একাধিক কার্ড। অথচ সব কার্ডের বিপরীতেই পণ্য বরাদ্দ দিয়েছে টিসিবি। এ ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে উপজেলাজুড়ে প্রকৃত দরিদ্রদের পরিবর্তে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছিল দলীয় নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া সুবিধাভোগীদের অনেকেই জানেও না তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টিসিবি কার্ডে নাম বসিয়ে পণ্য তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্র। শুধু তাই নয়, একই পরিবারে একটি কার্ড প্রাপ্তির নিয়ম থাকলেও একই পরিবারে দেওয়া হয়েছে একাধিক কার্ড। তেমনি একজন উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক মহিলা কাউন্সিলর তহমিনা বেগম। নিজ পরিবারে নিয়েছেন একাধিক কার্ড।
পরিবারপ্রতি একটি ফ্যামিলি কার্ডপ্রাপ্তির সুযোগ থাকলেও কীভাবে তিনটি কার্ড পেয়েছেনÑ এমন প্রশ্নে তহমিনা বেগম জানান, তিনি তালিকায় নাম দেননি। তার ছেলে নিজেই পৌরসভায় গিয়ে কার্ড করে নিয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বাহাদীপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, আব্দুর রহিম, রুবিনা খাতুন, আনছার আলীসহ একই গ্রামের প্রায় ১৫ পরিবারের নামে টিসিবির কার্ড বরাদ্দ থাকলেও তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। অথচ বিগত দুই বছর যাবৎ এসব কার্ডের বিপরীতে পণ্য তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।
এ বিষয়ে তারা জানান, নতুন করে টিসিবি কার্ড করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন তাদের নামে পূর্বে থেকেই কার্ড ইস্যু করা আছে এবং তাদের কার্ডের বিপরীতে নিয়মিত পণ্য ওঠানো হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ বলেন, শুধু লালপুরেই নয় জেলাজুড়ে বিগত সময়েও টিসিবি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে; যা এখনও চলমান রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে এমন অনিয়ম প্রশাসনের চরম অবহেলা বলে মনে করছি। জরুরি ভিত্তিতে পূর্বের তালিকা সংশোধন করে প্রকৃত ব্যক্তিরা যেন এসব কার্ড পান, সেটা প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের নাম তালিকায় আছে কিনা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’