‘অনুমতি’ ছাড়াই মামলা
বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:১২ পিএম
বগুড়ায় পরিবারের আপত্তির মুখে প্রায় এক বছর আগে মারা যাওয়া যুবদল কর্মী ফোরকান আলীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন না করেই ফিরে গেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ।
ফোরকানের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বৃহস্পিতবার (২৮ নভেম্বর) একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ লাশ তুলতে যায়। তবে এ সময় লাশ তুলতে আপত্তি জানায় পরিবার।
যুবদল কর্মী ফোরকান আলী বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসিড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
জানা গেছে, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিএনপির একটি মিছিলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফোরকান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিনই লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ইউনুছ আলী হলুদ বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ১৬০ নেতাকর্মীকে এতে আসামি করা হয়।
আদালতের নির্দেশে মামলাটি শাজাহানপুর থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে পুলিশ এ মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সাজাপুর এলাকায় মহাসড়কে উঠামাত্রই এক নম্বর আসামি শেখ হাসিনার নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা মিছিলে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় যুবদল কর্মী ফোরকান রক্তাক্ত ও জখম হন। পরে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাদী আরও উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে সেসময় নিহতের পরিবার মামলা করার সাহস পায়নি।
এ দিকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করতে যায়। এ সময় ফোরকান আলীর পরিবার থেকে আপত্তি জানানো হয়।
‘অনুমতি ছাড়াই মামলা করেছেন বাদী’
ফোরকান আলীর বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে বিএনপির মিছিলে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাকে কেউ হত্যা করেনি। তার শরীরে কোনো জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। আমার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ায় আমরা সেই সময় মামলা করিনি।’
রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এখন এই মামলা করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের অনুমতি না নিয়ে ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে ইউনুছ আলী হলুদ আদালতে মামলা করেছেন। আমি এফিডেভিটের মাধ্যমে আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি আদালতকে জানিয়েছি। তবে এখনো শুনানি হয়নি। এছাড়াও মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা এবং আসামিদেরকে হয়রানি না করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাদী যুবদল নেতা ইউনুছ আলী হলুদ বলেন, ‘আলোচনা করেই মামলা করা হয়েছে। মামলায় নিহত ফোরকানের একজন আত্মীয়ের নাম থাকায় এখন তার বাবা অস্বীকার করছেন।’
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করতে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানোর কারণে লাশ উঠানো যায়নি।’
বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ থাকলেও লাশ উত্তোলনের ক্ষেত্রে আমাদের নিহতের পরিবারের সহযোগিতা এবং কবর সনাক্ত করতে হয়। ফোরকানের বাবা বলেছেন- মামলার বিষয় তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, কিন্তু আদালতের কোনো নির্দেশনা তার কাছে নেই। ফোরকানের বাবা সময় নিয়েছেন। আদালতে যোগাযোগ করে লাশ না উঠানোর জন্য নির্দেশনা নিয়ে আসবেন। এ কারণে লাশ উত্তোলন না করে তাকে সময় দেওয়া হয়েছে।’