ময়মনসিংহ রেলওয়ে
শফিক সরকার, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৩ পিএম
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৪ পিএম
বগুড়ার আদমজির বাসিন্দা রানা হোসেন। রেলওয়ের গেটকিপার হিসেবে কাজ করেন ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুরপাড় রেল ক্রসিংয়ে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করেন একটি ভাড়া বাসায়। যে বেতন পান, তা দিয়ে কোনোভাবে চলছিল সংসার। কিন্তু ছয় মাস ধরে বেতন না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার মতো সারা দেশের গেটকিপার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সবাই চরম কষ্টে পরিবার নিয়ে জীবন পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ে মন্ত্রণালয় থেকে মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের রেল ক্রসিংয়ে ২০১৫ সালে সারা দেশে গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতনে ১ হাজার ৫০৫ জন নিয়োগ পান সারা দেশে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে তাদের বিভিন্ন গেটে দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আওতায় ময়মনসিংহে রয়েছেন ৩৮ জন। এত দিন ঠিকঠাকমতোই বেতন পাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু গত জুন থেকে বেতন বন্ধ রয়েছে। গত বছরও একাধারে ছয় মাস বেতন বন্ধ ছিল গেটকিপারদের। অভিযোগ রয়েছেÑ প্রকল্প পরিচালকদের নানা গাফিলতিতে তাদের বেতন হচ্ছে না। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালকদের স্বার্থে তাদের চাকরি রাজস্ব হচ্ছে না।
নগরীর ইটাচকি রেল ক্রসিংয়ের কিপার শারীরিক প্রতিবন্ধী এখলাছ উদ্দিন জানান, তিনি ভাড়া বাসায় থাকেন। বকেয়া পড়ায় বাসার মালিক তাদের উঠিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন। আর কীভাবে সংসার চালাবেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়েছেন। পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন।
এ ছাড়া কর্মস্থলে গেটকিপারদের নানা সম্যস্যা রয়েছে বলেও জানান। একাধিক কিপার জানান, তাদের বিশ্রাম ঘরে নেই বৈদ্যুতিক লাইন ও টয়লেটের ব্যবস্থা। অন্ধকারেই কাটে তাদের রাত। স্টেশন থেকে দেওয়া হয় না রেল আসা-যাওয়ার সংকেত। এক গেটকিপার অন্য কিপারকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেন। এজন্য তাদের মোবাইল বিল দেওয়া হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন কিপার বলেন, তাদের চাকরি অনেক আগেই রাজস্ব খাতে চলে যেত। কিন্তু প্রকল্প পরিচালকদের স্বার্থে নেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া প্রকল্প পরিচালকদের কাছে নানাভাবে হয়রানি হতে হয়।
জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক নাইমুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, একনেকে গেটকিপারদের বেতনের ফাইল পাঠানো হয়েছে। পাস হলেই তাদের বেতন একসঙ্গে দেওয়া হবে। গত বছরও বেতন বন্ধ ছিল, পরে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগের কথা জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি এবং বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।