দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৩ এএম
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের অধীনে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু দুই বছরের সেই কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। এতে পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে রোগীদের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতেই দীঘিনালা ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাজটির দায়িত্ব পায় ম্যাগ কন্সট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে জরাজীর্ণ পুরোনো হাসপাতালটির ১০ শয্যায় রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। দীঘিনালা ছাড়াও পাশের লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রোগীরাও হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে এসব রোগীকে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, পুরোনো ১০ শয্যায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগী। শয্যা সংকট থাকায় মেঝেতে বসে বা শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। বৃষ্টি এলে পুরোনো জরাজীর্ণ টিনের ফুটো দিয়ে শয্যাগুলোতে পানি পড়ে রোগীর শয্যায়। পুরোনো শয্যা জরাজীর্ণ টিনের চালের ঘরে লাইট ও ফ্যানও নেই। তার ওপর রয়েছে মশার উপদ্রব।
জানা যায়, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের বন্যায় প্লাবিত বিভিন্ন এলাকার মানুষের বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে অনেক রোগী। তাদের কযেকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, শয্যা সংকট থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই ফেরত যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে। অনেককে আবার পাঠানো হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালে। পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ ও ব্যবস্থা না থাকায় মা ও শিশুদের জন্য এখন আর উপযুক্ত নয় জরাজীর্ণ এ হাসপাতাল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কবে নাগাদ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ শেষ বা ভবনগুলো বুঝিয়ে দেবেÑ তা-ও জানা নেই কারও।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, কাজের মেয়াদ কয়েক বছর আগে শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণেই বিভিন্ন অজুহাতে পিছিয়ে আছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ। এ কারণে দীঘিনালা এবং পাশের এলাকা, বাবুছড়া, লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা এটাও মনে করেন যে, যত দ্রুত সম্ভব ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দেবে, তত দ্রুতই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে এ উপজেলার সাধারণ মানুষের জন্য।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সোহেলী জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ৫০ শয্যার ভবনটি দ্রুত সম্পন্ন করে যেন সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এই জরাজীর্ণ ভবনে চিকিৎসাসেবা নিতে প্রচণ্ড ভয় লাগে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার বলেন, ‘কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একাধিকবার সময় বাড়িয়ে নিয়েও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ শেষ বা বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে শয্যা সংকটে অতিরিক্ত রোগীদের চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। নতুন কমপ্লেক্স বুঝে পেলেই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক রোগীকে নিরুপায় হয়ে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। ৫০ শয্যার কমপ্লেক্সটি দ্রুত সম্পন্ন করলে স্থানীয় রোগীদের ভোগান্তি কমবে।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার কল দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা যায়নি। এর মধ্যে একাধিকবার সময়ও নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়।’ প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যয় আপাতত সঠিক বলা যাচ্ছে না। আমার জানামতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সেটা হলেই কাজটি দ্রুত শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’