ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪২ পিএম
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন স্বামী। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) পৌর শহরের রাণীবাজার শাহি মসজিদের পেছনের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতরা হলোÑ মৃত গরেঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাস (৩২), তার স্ত্রী গাজিপুরের নির্মল মল্লিকের মেয়ে নিপা মল্লিক (২৬), ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৭) ও মেয়ে কথা বিশ্বাস (৪)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের রাণীবাজার শাহি মসজিদের পেছনে শাহজাহান মিয়ার বিল্ডিংয়ের ছয় তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি রুমে পরিবার নিয়ে সাবলেট থাকতেন জনি বিশ্বাস। গত রবিবার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নরসিংদীর আনারাবাজ নিজগ্রামে যান তিনি। সেখান থেকে গত সোমবার সন্ধ্যায় ফেরেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পাশের রুমের ভাড়াটিয়া ও জনি বিশ্বাসের কর্মস্থলের কর্মচারীরা ডাকাডাকি করে কারও সাড়া না পেয়ে সন্দেহবশত দরজা ভেঙে ভেতরে চারজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। জনি বিশ্বাসকে ফাঁসি অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ভবনের মালিক রিনা বেগম বলেন, ‘আড়াই মাস আগে জনি বিশ্বাসের পরিবার ভাড়া নেয়। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া জানান তারা দরজা খুলছে না। পরে আবার বিকাল ৩টায় জানান এখনও দরজা বন্ধ রয়েছে। এ সময় স্থানীয়রা এসে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।’
জনি বিশ্বাসের পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া সৃষ্টি বর্মণ বলেন, ‘২৫ নভেম্বর জনি তার পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় ফেরে। আমি তখন বাজারের পাশে একটি কাজে যাই। রাতে ফিরে এসে দেখি তাদের দরজা বন্ধ। আজ (গতকাল) সকাল ১১টায় তাদের ডাকাডাকি করি, তারা দরজা খোলেনি। বিকাল পর্যন্ত দরজা বন্ধ থাকায় বাড়ির মালিকসহ প্রতিবেশীদের জানাই। পরে সবার উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে তাদের মরদেহ দেখতে পাই।’
এ বিষয়ে নিহতের মা শিখা রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘১০ বছর ধরে জনি ও তার দুই ভাই ভৈরবে থাকে। জনি ভৈরব বাজারে মিজান মিয়ার ওয়ার্কশপে কাজ করত। আট বছর আগে ছেলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বউয়ের সঙ্গে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। দুই দিন আগে ছেলে তার বউকে নিয়ে এসেছে। ছেলে আমাকে ভয় পায় বলে কিছুই জানাত না। আমি ছোট নাতনির কাছে শুনেছি, তারা এখানে বছরখানেক থাকবে। ছেলের বউ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কী কারণে আমার ছেলে এ কাণ্ড ঘটাল কিছুই বুঝতে পারছি না।’
এদিকে পুলিশ সূত্র বলছে, ধারণা করা হচ্ছে জনি বিশ্বাস প্রথমে স্ত্রীকে গলা কেটেছেন পরে দুই ছেলেমেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন। পরে নিজেই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করি। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো কিশোরগঞ্জের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনও মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছেÑ স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করেই আত্মহত্যা করেছেন জনি বিশ্বাস।’