সুনামগঞ্জ বাসস্টেশন
সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৪ পিএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৪ পিএম
সুনামগঞ্জের একমাত্র বাস রাখার জায়গা মল্লিকপুরের নতুন বাসস্টেশন। একটি যাত্রী ছাউনি, অফিস ঘর ও একটি বড় পুকুর নিয়ে ১৯৯৪ সালে ছয় একর জমির ওপর গড়ে উঠেছিল এই স্টেশন। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে যাত্রী ও পরিবহন বেড়েছে। একই সঙ্গে অবকাঠামো হয়েছে ব্যবহার অনুপযোগী। মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে গেল বছর পুকুর ভরাট করে টার্মিনাল সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। আরেকটি স্থানে মাইক্রোস্ট্যান্ড করার নামে পুকুর ভরাট করছিল জেলা পরিষদ। এই দুটি স্থান ভরাট করতে কেবল বালুবাণিজ্য হয়েছে। পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের এখনও কোনো উপকারে আসেনি এই দুই স্ট্যান্ড।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন এসব অবকাঠামো সংস্কার না করায় বর্তমানে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। অন্যদিকে যাত্রী ও পরিবহনের সংখ্যা এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বাসস্টেশনে পরিবহনের জায়গা সংকুলান হয় না। সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের স্থানে স্থানে সারিবদ্ধ করে বাস রাখায় শহরে প্রবেশমুখে যানজট লেগেই থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, বাসস্টেশন ও মাইক্রোস্ট্যান্ড করার নামে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বালুবাণিজ্য করেছেন। পুকুর ভরাটকে কেন্দ্র করে বালুর ব্যবসা হয়েছে তাদের। নদীতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে আশপাশের মানুষের কাছে বালু বিক্রি করেছে তারা। এতে বাসস্টেশন আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের নামে কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, কিন্তু সুনামগঞ্জবাসীর কোনো উপকার হয়নি।
বাসমালিক-শ্রমিক সংগঠনের সংশিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন ৪০০ বাস এখানে চলাচল করলেও ৬০টির বেশি সংকুলান হয় না স্টেশনে। অন্য বাসগুলো সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের তিন কিলোমিটার জুড়ে রাখা হয়। এ কারণে সুনামগঞ্জ শহরে ঢোকার একমুখী সড়কে পরিবহনের ধীরগতি লেগেই থাকে।
পরিবহন শ্রমিক আব্দুল মতিন বলেন, বাসস্টেশনে গাড়ি রাখা যায় না। বাইরে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। আগে পুকুরের পানিতে গাড়ি ধোয়া যেত। এখন সেটিও বন্ধ। আমাদের বিশ্রামের জায়গা, ওয়াশরুম নেই। বাসস্টেশনের কাজটি করে দিলে উপকার হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ম্যানেজার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির মুখে গেল সরকারের আমলে এই পুকুর ভরাট করে দেওয়া হয়। তবে যতটুকু দেওয়ার কথা, ততটুকু দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় গাড়ি এখানে রাখলে দেবে যায়। পরে টাকা খরচ করে মেশিন দিয়ে তুলতে হয়। আমরা বাসস্টেশনের উন্নয়ন চাই, তবে লোক দেখানো কোনো উন্নয়ন চাই না। আশা করি বর্তমান সরকার এই বাসস্টেশন সংস্কার ও আধুনিকায়নে নজর দেবে।
সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. আব্দুল মতিন বলেন, ১৯৯৪ সালে এই বাসস্টেশন করা হয়েছে। এরপর থেকে আমাদের দাবি ছিল এর আধুনিকায়ন করার। এমন দাবির প্রেক্ষিতে মাঝে মাঝে কিছু সংস্কার কাজ হয়েছে। কয়েক মাস আগে পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই। যাত্রী-শ্রমিকদের জন্য পুরোনো কিছু ওয়াশরুম রয়েছে। এগুলো এখন আর ব্যবহার করা যায় না। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার নেই। ভেতরে একমাত্র ইট সলিংয়ের সড়কের বেহাল অবস্থা। পুকুর ভরাটের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কত টাকার কাজ করা হয়েছে আমরা জানি না।
মাইক্রোস্ট্যান্ড করার জন্য পুকুর ভরাট
শহরের মল্লিকপুর কালী মন্দিরের পাশে ৬৯ শতাংশ পুকুর শ্রেণির জেলা পরিষদের জায়গা ভরাট করেছে কর্তৃপক্ষ। মাইক্রোস্ট্যান্ডের নামে এই পুকুর ভরাটের কাজ দেওয়া হয়েছিল বিগত সরকারদলীয় নেতাদের। এখানেও তারা ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে পুকুর ভরাটের পাশাপাশি স্থানীয়দের কাছে বালু বিক্রি করছে। তবে ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর অবৈধ এই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরের অর্ধেক ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। একপাশের জায়গা দখল করে তৈরি হয়েছে জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন কয়েকটি দোকান। এসব দোকান থেকে জেলা পরিষদ প্রতিমাসে ভাড়া আদায় করে।
মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা মো. কাশেম মিয়া বলেন, এটি আবাসিক এলাকা। এখানে পুকুর ভরাট করছিল জেলা পরিষদ। পাঁচ আগস্টের পর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী থেকে লাগানো পাইপ খুলে নিয়ে গেছে। এখানে মাইক্রোস্ট্যান্ড হলে আমাদের সমস্যা হবে। আবাসিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে।
স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুরাতন বাসস্টেশনটি শহর থেকে সরানোর জন্য নতুন বাসস্টেশনে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এটিকে ব্যবহার উপযোগী করার ইতোমধ্যে এক কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করব। কাজটি শেষ হলে এটি ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যাবে। সবার দাবির প্রেক্ষিতে আশা করি খুব দ্রুত আধুনিক বাসস্টেশন করা সম্ভব হবে।
মাইক্রোস্ট্যান্ড করার জন্য পুকুর ভরাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, পুকুর শ্রেণির জমি ভরাট আইনের লঙ্ঘন। আমরা নথিপত্র দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।