সুজাউদ্দৌলা ডিগ্রি কলেজ
রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১২ পিএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৪ পিএম
সাবেক অধ্যক্ষ এএসএম মুস্তাফিজুর রহমান মানজাল।
আওয়ামী লীগের পদে থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, পকেট কমিটিসহ নানা অনিয়ম করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী নগরীর আলহাজ সুজাউদ্দৌলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এএসএম মুস্তাফিজুর রহমান মানজালের বিরুদ্ধে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৬ সালে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদ বাগিয়ে নেন তিনি। তখন থেকেই তার ক্ষমতার অপব্যবহারের শুরু।
৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মানজাল অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর কলেজ গভর্নিং বডি গঠিত অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সাবেক অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও বিপুল অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজশাহীর আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষ মানজালের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে কলেজটিতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট অধ্যক্ষের পদ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি কলেজ থেকে পালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় তিনি সময় নগদ ২০ লাখ টাকা এবং দুর্নীতির প্রমাণ মুছে ফেলতে রেজুলেশন খাতা ও কলেজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নিয়ে যান।
চাকরিকালীন সময়ে সাবেক মেয়র এইচএম খাইরুজ্জামান লিটন ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনীর আস্থাভাজন ছিলেন মানজাল। নিজেও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে অন্যতম মদদদাতা ছিলেন মানজাল। ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান না করে লুটপাটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিপুল অর্থ তছরুপ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির অডিটে তার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ ১ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ১৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিক্ষক, কর্মচারী কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি সেখানে লেনদেন করতেন না। প্রতিষ্ঠানের আদায়কৃত অর্থ তিনি নিজের কাছে রেখে ইচ্ছামতো খরচ করতেন। প্রতি বছর অডিট হলেও পকেট কমিটির মাধ্যমে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেগুলো ম্যানেজ করতেন। খবর নিয়ে জানা গেছে সাবেক অধ্যক্ষ মানজালের পবা উপজেলায় ৩০ বিঘা ও ২০ বিঘার দুটি পুকুর রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আলিশান বাংলো বাড়ি।
এদিকে কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৮ বছরে ভর্তি ফি, বেতন, সেশন চার্জ, ফরম পূরণ, পরীক্ষার ফি, অনুদান ও টিফিন বাবদ প্রতিষ্ঠানের আয় হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ টাকা। এর বিপরীতে খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৭ হাজার ১৫২ টাকা। এর মধ্যে কলেজের বোর্ড ফি ও কেন্দ্র ফি বাবদ দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৭১ টাকা এবং কলেজ উন্নয়নে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮১ টাকা। বাকি ১ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ১৬ টাকার কোনো হদিস নেই। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছেন সাবেক অধ্যক্ষ মানজাল।
মানজালের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে অর্থ আত্মসাৎ, ভয়ভীতি প্রদর্শন, শিক্ষক কর্মচারীদের নির্যাতন, অপমান অপদস্থসহ গোপন কক্ষে নারি কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনা হয়েছে। এত অপকর্মের পরও কলেজের শিক্ষক কর্মকর্তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল। এ নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর নগরীর রাজপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন।
আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা তার হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত চাই এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত এএসএম মুস্তাফিজুর রহমান মানজালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।