রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী
কুড়িগ্রাম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:০৯ পিএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৭ পিএম
প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা।
বদলির ১০ মাস অতিবাহিত হলেও কর্মস্থল ছাড়েননি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা। এর কারণ হিসেবে অবাধ ঘুষ বাণিজ্য বলে অভিযোগ রাজারহাটবাসীর। প্রতিটি নির্মাণকাজে এ প্রকৌশলীকে নির্দিষ্ট কমিশন দিতে হয়। আর এ কমিশন বাণিজ্য বন্ধের দাবি সাধারণ ঠিকাদারদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত একপত্রে উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানাকে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি অদৃশ্য কারণে বদলির অফিস আদেশ তোয়াক্কা না করে পূর্বের কর্মস্থল রাজারহাটেই অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে আওয়ামী সরকারের কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার হামিদুর রহমানের মদদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৌশলী সোহেল রানার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য। সে সময় ওই এমপির সঙ্গে গভীর সখ্যতার কারণে বদলির ১০ মাসেও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। বরং পূর্বের কর্মস্থল রাজারহাটেই ক্ষমতার খুঁটি পাকাপোক্ত করে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জোড়সয়রা হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণকাজের ৭২ লাখ ৯ হাজার ৩৯৯ টাকার কাজে ৩ শতাংশ কমিশন দাবি করেন সোহেল রানা।
ঠিকাদার আরিফুল রহমান আরিফ বলেন, ‘জোড়সয়রা হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের সময় কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় তার বিল আটকে দেওয়া হয়। তার কাজের বিল আদায়ের জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয় তাকে।’
সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, রাজারহাট এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মণ্ডলের হাত দিয়ে প্রতিটি কাজের বিলে দুই থেকে তিন পার্সেন্ট কমিশন নিয়ে থাকেন প্রকৌশলী সোহেল রানা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, ইঞ্জিনিয়ার স্যার যেভাবে আমাদের হয়রানি করেন তা মনে হয় না অন্য কোনো উপজেলাতে এ রকম কেউ করে। তিনি তিলকে তাল বানিয়ে প্রতিটি বিল থেকে ২-৩% টাকা হাতিয়ে নেন। না দিলে মাসের পর মাস বিলের জন্য ঘুরতে হয়। প্রকাশ করলে ঠিকাদারদের হয়রানির শিকার হতে হয়। যে কারণে কেউ মুখ খোলে না।
কুড়িগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান রনি বলেন, ‘অনেক ঠিকাদার ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের পর এমন ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অপ্রত্যাশিত। আমরা দ্রুত তার অপসারণ দাবি করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, ‘তিন বছর পূর্ণ না হওয়ায় কর্মস্থল ত্যাগ করিনি। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ সত্য নয়।’
এলজিইডি কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কেএম জুলফিকার আলী বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় নেই। ঘুষ বাণিজ্যের প্রমাণ থাকলে তাকে আইনের আওতায় তুলে দিন।’ এ ছাড়া তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।