দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন
মহসিন রেজা রুমেল, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৫৭ এএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৫৭ এএম
যাত্রীপূর্ণ দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন। প্রবা ফটো
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনটি ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন। এ অঞ্চল থেকে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। সে কারণে বৃহত্তর এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা যাতায়াতে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। এ স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, রৌমারী, গাইবান্ধা জেলার বালাসী, ফুলছরির অনেক যাত্রী ট্রেন ধরে ঢাকা যাতায়াত করে। দেওয়ানগঞ্জে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তঃনগর ট্রেন যাতায়াত করে। প্রতিদিনই এ স্টেশনে যাত্রীর চাপ এ দুটি ট্রেনের আসনের দিগুণ থাকে। অনেক যাত্রী স্টেশনে টিকিট না পেয়ে বিকল্প পথে ঢাকা যাতায়াত করছে। এতে একদিকে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়াও গুনতে হয় অধিক। তাই আসনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে নতুন এক জোড়া ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছে স্থানীয় যাত্রীরা।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস প্রতিদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে আর বেলা ৩টায় দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর মধ্যে আবার তিস্তার সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ রয়েছে। এ দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের তুলনায় ঢাকাগামী যাত্রী অনেক বেশি। এ ছাড়াও ব্যক্তিমালিকানার কমিউটার নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু কমিউটার ট্রেন দুটি যত্রতত্র স্টেশনে দাঁড়ায়। সে কারণে বেশিরভাগ যাত্রী ঢাকা যাতায়াতে আন্তঃনগর ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা চলাচলে এ স্টেশনে বরাদ্দকৃত আসনসংখ্যা ২০৪টি। এর মধ্যে আন্তঃনগর তিস্তায় শোভন চেয়ার ৪৮টি, স্নিগ্ধা এসি চেয়ার ৪৫টি ও এসি কেবিন ৩টি। আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্রে শোভন চেয়ার ৫৮টি ও স্নিগ্ধা এসি চেয়ার ৫০টি। শতভাগ টিকিট অনলাইনে যাওয়াতে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টার থেকে দ্বৈতভাবে টিকিট সংগ্রহ করা যায়। শতভাগ টিকিট রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বরেই বুকিং হয়। এ কারণে অনেক যাত্রী কাঙ্ক্ষিত সময়ের টিকিট সংগ্রহ করতে পারে না। কেবলমাত্র অনলাইন সার্ভিস সম্পর্কে অধিক জ্ঞানসম্পন্নরাই আগেভাগে টিকিট কেটে রাখে।
যাত্রীরা জানায়, বরাদ্দকৃত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন যাত্রীর তুলনায় এ স্টেশনের জন্য যথেষ্ট নয়। যাত্রীর চাপ অনুপাতে কমপক্ষে আরও একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন এ স্টেশনের জন্য বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে যাত্রীরা। তাতে যাত্রী দুর্ভোগ লাঘব হবে। তারা দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে নতুন ট্রেন চালুসহ ঢাকা চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন দুটির বগি বাড়িয়ে আসনসংখ্যা বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর ট্রেনযাত্রী আব্দুর রহিম বলেন, ‘আন্তঃনগর তিস্তা ট্রেনের টিকিট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে এসেছি। স্টেশন কর্তৃপক্ষ টিকিট নেই বলে জানায়। বাধ্য হয়ে সিএনজিযোগে জামালপুর যাচ্ছি। সেখান থেকে বাস ধরে ঢাকা যাব। এতে একদিকে সময় ও দুর্ভোগ পোহাতে হবে, অন্যদিকে দ্বিগুণ অর্থ গুণতে হবে।’ তিনি দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে আরেকটি নতুন ট্রেন চালুর দাবি জানান।
পৌর শহরের ট্রেনযাত্রী মেজবাউল হক বলেন, ‘আমি অনলাইন সম্পর্কে বুঝি না। সে কারণে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারি না। টিকিট কাটতে আমাকে অন্যের সহায়তা নিতে হয়। তার পরেও কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে ঢাকা যাতায়াতে ট্রেন ভাগ্যে জুটে না।’ তিনিও দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি জানান।
কৈবর্তপাড়া এলাকার ট্রেনযাত্রী স্বাগতম দাস জানান, শেষ স্টেশন হওয়ায় এ স্টেশনে যাত্রীর চাপ থাকে বেশি। স্বল্পসংখ্যক টিকিট এ স্টেশনের জন্য যথেষ্ট নয়। এ স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ ছাড়াও কয়েকটি উপজেলার যাত্রী ট্রেন ধরে ঢাকা যাতায়াত করে। সে কারণে যাত্রী অনুপাতে এ স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা প্রয়োজন।
ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরেরচর গ্রামের ট্রেনযাত্রী শেখ শাদির ভাষ্য, যাত্রার চার দিন পূর্বে ঢাকার টিকিট অনলাইনে কাটতে গিয়ে পাইনি। পরে কাউন্টারে এসে জানতে পারি টিকিট নেই। আমার মতো অনেকেই স্টেশনে টিকিট কাটতে এসে পায়নি। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তিনি দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকা চলাচলকারী একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি জানান।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে চলে যাওয়ায় টিকিট কালোবাজারি নেই। তবে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। শতভাগ অনলাইনের যুগে টিকিট বৃদ্ধি করে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে এ স্টেশন থেকে এক জোড়া নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হলে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমবে।’