সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪২ এএম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪২ এএম
ছবি : সংগৃহীত
নগরীর আন্দরকিল্লায় ১৯৬৪ সালে নির্মিত একটি ভবন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ২০১০ সালে আইকনিক নগর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চসিক কর্তৃপক্ষ। সেই লক্ষ্যে ৪৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ১৪ বছর আটকে থাকার পর ২০১৬ সালে নতুন ডিপিপি প্রণয়নের পাশাপাশি প্রায় পাঁচগুণ বাড়িয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২০২ কোটি টাকা। নানা জটিলতা কাটিয়ে আইকনিক নগর ভবন নির্মাণে চলতি বছরের ৬ মে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি সামান্য। নগরভবন নির্মাণ প্রকল্পটি সঠিকভাবে এগোবে কিনা কিংবা আদৌ প্রয়োজন আছে কিনাÑ এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নগরবাসীর মনে।
তবে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৫৩ দশমিক ৪৫ কাঠা জায়গার ওপর ৩৮ হাজার ৪৯০ বর্গফুটের দুটি বেজমেন্টসহ ২১ তলা নগর ভবন নির্মিত হবে। প্রণয়ন নামের একটি প্রতিষ্ঠান ‘আইকনিক’ এই ভবনের নকশা প্রণয়ন করে। নগর ভবনের ওপরে থাকবে সিটি ক্লক। পাশাপাশি থাকবে মাল্টিপারপাস হল, কনফারেন্স হল ও ব্যাংকুয়েট হল। তবে পুরো নগর ভবন নির্মাণ হবে কয়েক ধাপে। প্রথম দফায় তিনটি বেজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোর নির্মাণে ২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোসার্স তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড ও মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে জেবি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেজমেন্টসহ ২১তলা ভবনের তিনতলার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
চসিকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আন্দরকিল্লার দুটি ভবনের একটি ২০১৯ সালে এবং অন্যটি গত বছর ভেঙে ফেলা হয়। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নগরীর টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নগরীর আন্দরকিল্লায় গিয়ে দেখা যায়, নগর ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি এখনও মাটির নিচে পাইলিংয়েই সীমাবদ্ধ। চারদিকে টিন দিয়ে ঘিরে পাইলিংয়ের কাজ করছেন কিছু নির্মাণশ্রমিক।
কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) ও চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা বলেন, ‘প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরপরই দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। এতে নির্মাণকাজ খুব একটা এগোয়নি। ইতোমধ্যে নতুন মেয়র মহোদয় যোগ দিয়েছেন। তার সঙ্গে এ প্রকল্প নিয়ে বসেছি। বর্তমানে নগর ভবনের সোল পাইলিংয়ের কাজ চলছে। ভবনটিতে মোট ৩২০টির মধ্যে ইতোমধ্যে ৮২টি পাইলিং কাজ হয়েছে। একপাশে পাইলিং করতে গিয়ে দেখা গেছে, মাটির নিচে বিশাল একটি ড্রেন। এসব নানা জটিলতা নিয়েই নির্মাণকাজ চলছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি ১০ শতাংশ। প্রথম ধাপে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে নেওয়া এই নগর ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এই ১৪ বছরে চারজন মেয়র ও একজন প্রশাসক হয়েছেন। তারা কেউই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ৫ নভেম্বর চসিক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ডা. শাহাদাত হোসেনের হাত ধরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে পারে।
নতুন নগর ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে চসিকের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়েছি দুই সপ্তাহের মতো হচ্ছে। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করছি। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সেবা নিশ্চিতে কাজ করছি। নগর ভবন হবে; তবে ক্রমান্বয়ে। সিটি করপোরেশনের টাকায় এই নগর ভবন নির্মিত হবে। সেটা জনগণের টাকা। তাই জনগণের সেবাটা নিশ্চিতে কাজ করতে চাই। দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখছি চসিকের ৪৫০ কোটি টাকা দেনা। এই দেনাও তো পরিশোধ করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়ুক। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে আগে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসি। এরপরই নগর ভবন নির্মাণে জোর দেব।’
ডিপিপি সূত্রে জানা যায়, চসিকের ৫৩ দশমিক ৪৫ কাঠা জায়গার ওপর চট্টগ্রাম নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নগর ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩৮ হাজার ৪৯০ বর্গফুটের তিনটি বেজমেন্টসহ ২১তলা নগর ভবন নির্মাণে বর্তমানে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভবন ও আনুষঙ্গিক নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩৯ হাজার, ফার্নিচার সরবরাহ ও ইন্টেরিয়র কাজে ব্যয় ২৫ কোটি, ছয়টি লিফট সরবরাহ ও স্থাপন কাজে ৬ কোটি, তিনটি এরিয়াল লিফট স্থাপনে ৬ কোটি, একটি সাবস্টেশন, জেনারেটর এবং সোলার প্যানেল সরবরাহ ও স্থাপনে ৪ কোটি, দুটি এয়ারকুলার সরবরাহ ও স্থাপনে ২ কোটি, দুটি অফিস বাস ২ কোটি ও তিনটি ওয়াটার ভাউজার ৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
চসিকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালের ১১ মার্চ তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নগর ভবন নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর গত ১৪ বছরে তিনি ছাড়াও এম মনজুর আলম, আ জ ম নাছির উদ্দীন, রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছয় মাস খোরশেদ আলম সুজন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। তারা কেউই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি।