যমুনা রেলসেতু
হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৪ এএম
যমুনা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতুর প্রবেশপথ। প্রবা ফটো
যমুনা নদীর ওপর তৈরি দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেল সেতুর মূল অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণাধীন এই রেল সেতু চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বা শেষের দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও এ বছর উদ্বোধন হচ্ছে না। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতুর পূর্ব প্রান্তে নতুন রেলস্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তের রেলস্টেশনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। এখন রেল সেতু নির্মাণশ্রমিকরা রঙ-তুলি ও ঘষামাজার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
যমুনা রেল সেতু রেলওয়ে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন যমুনা রেল সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের ১ বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। ক্রসিংয়ে পড়বে না রেলগুলো। এতে সময় সাশ্রয় হবে ২০-৩০ মিনিট।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরে এর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হলে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা; যা প্রকল্পের ৭২.৪০ শতাংশ।
এই রেল সেতুর সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রেল সেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাঙ্কমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, মূল সেতুর কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং সেতুটির অন্যান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেতুটি নির্মাণে নির্ধারিত যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তা থেকে কিছু সাশ্রয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আগামী বছর ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।