চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৫ পিএম
সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুব। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুব হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর একদল শিক্ষার্থী কলেজের ভেতর অবরুদ্ধ করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। ওই সময় তিনি সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। এরপর থেকে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। পরিবার, সহকর্মী ও স্বজনদের দাবি ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অপমান সহ্য করতে না পারার জেরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতান নেওয়া হলে ১১ টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ সময় তার মৃত্যুর খবর শুনে সেখানে স্বজনরা আহাজারি শুরু করেন। তার স্ত্রীকে বারবার বলতে শুনা যায়, ‘কলেজের ছাত্রদের কারণে তার মৃত্যু হল।’
এস এম আইয়ুব আলী রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তার বাড়ি বাঁশখালীর কাথারিয়া ইউনিয়নে। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চান্দগাঁও মৌলভী পুকুড় পাড় থাকতেন তিনি। শনিবার বিকেলে মৌলভী পুকুড় পাড়ে তার প্রথম জানাজা শেষে তাকে বাশখালী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইসরাত আহমেদ রিজভী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তিনি খুব জনপ্রিয় আর সজ্জন একজন শিক্ষক ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীদের একটা অংশ যেটা করেছে সেটা সত্যিকার অর্থে অন্যায় ছিল। পদত্যাগের পরেও তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছিল। এসব নিয়ে তিনি অনেক চাপে ছিলেন। আজতো কলেজ কর্তৃপক্ষও এসব কথা বলছে। তবে সেই সময় এসব থামানো গেলে হয়তো এই ঘটনা ঘটতো না। উনার এমন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৪ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ। এটি নগরীর চান্দগাঁও থানার চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত। এ কলেজে ৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন শতাধিক। নগরীতে রাজনীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবেই বেসরকারি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচিত। শিক্ষানুরাগী, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও উদ্যোগে চট্টগ্রামে যে ৪০ টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ তার অন্যতম।
বিশাল ক্যাম্পাসের সব জমি ভবন তাদের অর্থায়নে হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে একটি অ্যাকাডেমিক ভবন দেওয়া হয়েছে। ১২ জনের মতো শিক্ষককে দেওয়া হয় এমপিও। অন্যদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ কলেজের আয় থেকে, ঘাটতি থাকলে তা বিএসসি পরিবার থেকে দেওয়া হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এ কলেজে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল একটি পক্ষ। কখনো বৈষম্যবিরোধী, কখনো এলাকার বাসিন্দা হিসাবে দাপট দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে তারা দাবি-দাওয়ার নামে প্রতিষ্ঠান অচল করার চেষ্টা চালায়। বেতন কমানো ও কিছু শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের মাসিক বেতন কমানো হয়। কিন্তু এরপরও ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ঢুকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে অরাজকতা শুরু করে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
একপর্যায়ে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে জোর করে উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবকে পদত্যাগপত্রে সই করতে বাধ্য করা হয়। এ সময় পেছন থেকে একজন তাকে ছুরি দিয়ে ভয় দেখান। একপর্যায়ে উপাধ্যক্ষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের হাতে তিন শিক্ষকের নাম সংবলিত একটি বরখাস্ত আদেশের কপি ধরিয়ে দিয়ে সেটিতেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। যে তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়েছে তারা হলেন মো. দবির উদ্দিন, মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ও একেএম ইসমাইল।
২৬ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠান চয়ন দাশ । তার পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল্লাহ নূরী হাজেরা-তজু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ চয়ন দাশকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তিনি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কার্যালয়ে আগে থেকেই হাজেরা-তজু কলেজের কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দেখতে পান। সেখানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি এবং জামায়াতের একজন নেতাকে (বিদ্যোৎসাহী) সদস্য করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর পাঠানোর জন্য জোরপূর্বক তার কাছ থেকে (চয়ন দাশের) স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এই স্বাক্ষরে তার কোনো মতামত ছিল না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।