কালীগঞ্জের নদ-নদী ও জলাশয়
হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৯ পিএম
চিত্রা, ভৈরব ও বেগবতিÑএই তিন নদ-নদী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে উন্মুক্ত জলাশয়। এসব নদ-নদী ও উন্মুক্ত জলাশয় কচুরিপানায় ভরে গেছে। পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় এবং বিভিন্ন স্থানে নদী-খাল অবৈধ দখলে থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ভৈরব নদ, চিত্রা ও বেগবতি নদী ও নদীসংলগ্ন ৪৫ খাল রয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে অফদা খাল, নলডাঙ্গা রাজবাড়ির গুঞ্জনগর শশ্মানঘাট খাল, তৈলকূপী মামু খাল, কন্যার খাল, দীঘারপাড়া তত্তিপুর খাল, বলরামপুর কুল্টিখালীর শিরিষকাট খাল, কাশীপুর খাল ও পাতিবিলা খাল অন্যতম। এ ছাড়া মর্জাদ বাঁওড়, মাজদিয়া, বারফা, চাঁদবা ও শিমলাÑ এ পাঁচটি বাঁওড় রয়েছে। আর সাকোর, উত্তর, দিঘার, অরুয়া সালভা এবং তেতুঁল নামে ছয়টি বিল রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব নদ-নদী ও জলাশয়ের অধিকাংশই কচুরিপানায় পরিপূর্ণ। কচুরিপানার সঙ্গে পলিমাটি জমে জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কচুরিপানায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জেগে উঠেছে চর। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছে। এখন দূর থেকে দেখলেও জলাশয় মনে হয় না। বরং মনে হয় কোনো চারণভূমি। জলাশয়ে অক্সিজেন সংকটে মাছসহ জলজ জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে এসব জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহকারীরা পড়েছে চরম বেকায়দায়।
এমন পরিস্থিতিতে জলাশয়গুলো দ্রুত দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছে স্থানীরা। তারা জানান, এখনই যদি কচুরিপানা, পলি, শ্যাওলার গাদ অপসারণ না করা হয়, তাহলে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার বকেরগাছি এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলদাররা নদীর দুপাশ দখল করে একসময়ের খরস্রোতা নদীগুলো সংকুচিত করে ফেলেছে। আর কচুরিপানার যে পরিমাণে বিস্তার লাভ করেছে তাতে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয় কচুরিপানায় পরিপূর্ণ থাকায় পানিপ্রবাহে অন্যতম বাধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত দখলমুক্ত ও কচুরিপানা অপসারণের দাবি জানান তারা।
তৈলকূপী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুচ, মানিক কুমার, বাদল কুমার, সাইফুল, শিপলু হোসেন, জাকির হোসেন নামে একাধিক মৎস্যজীবী বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। এখন কচুরিপানা ও শ্যাওলার কারণে আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অচিরেই এগুলো নির্মূল এবং দখলমুক্ত না করা গেলে এসব জলাশয় সম্পূর্ণ নাব্যতা সংকটে পড়বে। কচুরিপানা আর শ্যাওলা পচে গিয়ে গাদের সৃষ্টি হয়। আর এসব গাদ জলাশয়ের তলদেশে গিয়ে ভরাট হয়ে জলাশয়গুলো রূপ নেবে চারণভূমিতে।
উপজেলার কাষ্ঠভাঙ্গা ইউনিয়নের মর্জাদ বাঁওড় পাড়ের লক্ষণ, নারায়ণ, নারদ, বকুলসহ কয়েকজন বলেন, কয়েক বছর হলো বাঁওড়ের দু’পাশে কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে দেশীয় মাছ দিনদিন কমে যাচ্ছে। কচুরিপানার আবর্জনায় নিচের স্তরে জমে ভরাট হয়ে বাঁওড় ছোট হয়ে আসছে। ভূগর্ভস্থ পানি না উঠলে দেশীয় প্রজাতির মাছ জন্মায় না। আমরা মাছ সংকটের আশঙ্কা করছি।
কালীগঞ্জ শহরের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চিত্রা নদী ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র এখনই দেখা যাচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উৎসব, কচুরিপানা ও পলিমাটিতে পরিপূর্ণ হয়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চিত্রা। এমন অবস্থা চলমান থাকলে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত এই জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করে খনন, কচুরিপানা ও পলিমাটি অপসারণ প্রয়োজন।
পরিবেশকর্মী শিবু পাদ বিশ্বাস বলেন, জলাশয়গুলো অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও খনন কাজ করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। পানিপ্রবাহ চলমান থাকলে কচুরিপানা জন্মাতে পারে না। বাঁওড় ও বিলের কচুরিপানা বা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ সমন্বিত উদ্যোগে পরিষ্কার করতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জানতে চাইলে পাউবো ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, আমরা সাধারণত জলাশয় দখলমুক্ত ও খনন করে থাকি। কচুরিপানা অপসারণে বাজেট বরাদ্দ থাকে না। বরাদ্দ এলে অপসারণে ব্যবস্থা নেব। দখলদারদের উচ্ছেদে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।