মোকছেদুল মমিন মোয়াজ্জেম, হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৬ পিএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৯ পিএম
পারিবারিক দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুরের হিলি আরনু জুট মিল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মিলের অন্তত ৭০০ শ্রমিক। এদিকে মিলের অংশীদারত্ব নিয়ে থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন অংশীদাররা।
হিলি পৌর এলাকায় ডাঙ্গাপাড়ায় অবস্থিত মেসার্স আরনু জুট মিলস লিমিটেডের অংশীদার তিন ভাই-বোন। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফি হাজী, চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম আজাদ এবং পরিচালক নুরুন নাহার আহমেদ আরনু। মিলটিতে কাজ করেন অন্তত ৭০০ শ্রমিক। গত ২৫ দিন ধরে মিলটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে মিল এলাকায় দেখা যায়, মিলটি চালু হবে এই আশায় আশপাশে ঘুরছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এ সময় কথা হয় আরসেদুল, মইনুলসহ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা বলেন, ২৫ দিন আগে আরনু জুট মিল বন্ধ করে দেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরপর থেকে তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মিলে কাজ করে তারা যা উপার্জন করতেন, তা দিয়েই সংসার চালাতেন। আজ ২৫ দিন ধরে কাজ না থাকায় তাদের সংসার অচল হয়ে পড়েছে। তারা চান মিলটি আবার চালু হোক।
কয়েকজন নারী শ্রমিক জানান, কাজ না থাকায় অনেক দিন ধরে তারা বসে আছেন। কিন্তু বসে থাকলে তো তাদের সংসার চলবে না। সংসারের খরচ ছাড়াও কিস্তি দিতে হয় তাদের।
হিলি শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি সবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আরনু জুট মিলে ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু গত ২৫ দিন ধরে মিলটি বন্ধ। এতে শ্রমিকরা খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি মিলটি দ্রুত চালু করা দাবি জানাচ্ছি।’
হিলি পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ‘আরনু জুট মিলটি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান। এটা কিছু দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে মিলে কর্মরত অনেক শ্রমিক বেকার জীবনযাপন করছেন। আমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে মিলটি চালু করার চেষ্টা করছি।’
আরনু জুট মিলের পরিচালক নুরুন নাহার আহমেদ আরনু বলেন, ‘আমি আর আমার বড় ভাই বিদেশে থাকি। কয়েক দিন আগে জানতে পারি আমার ভাই শেখ সাফি হাজী মিলটি বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন তিনি মিল বন্ধ করে রেখেছেনÑ সেটি জানি না। আমরা জানার জন্য দেশে ফিরে এসেছি।’
আরনু জুট মিলের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম আজাদ বলেন, ‘দেশে ফিরে দেখি মিলটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ২৫ দিন ধরে বন্ধ। এতে অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। আবার তিনি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আমরাও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছি। মিল বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা মিলের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করি। শনিবার (আজ) আমরা মিলটি চালু করব।’
এ ব্যাপারে আরনু জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাফি হাজী বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে আমার ভাই-বোন মিলটির কার্যক্রম চালিয়েছেন। কিন্তু তারা ব্যাংকের কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। এই জুট মিলের তারা ৬০ শতাংশ অংশীদার, আর আমি ৪০ শতাংশ। তারা বিদেশে থাকেন। ব্যাংক মিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাহলে আমি কেন একা এর দায়ভার নেব? এ কারণে মিল বন্ধ রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি যে সাত কোটি টাকার স্কেনশন (সম্প্রসারণ) নিয়েছি সেটা দিক। আর আমাকে মিলে না রাখতে চাইলে আমার ৪০ শতাংশ শেয়ার ফেরত চাই। কিন্তু এতে তারা রাজি নয়। শনিবার (আজ) থেকে জোর করে তারা মিল চালু করতে চান।’
হাকিমপুর (হিলি) থানার ওসি সুজন মিঞা বলেন, ‘হিলির আরনু জুট মিল বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। মিলের অংশীদার তিন ভাই-বোন। তারা পাল্টাপাল্টি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে তারা যেহেতু আপন ভাই-বোন, নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করছেন।’