রুবেল আহমেদ, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৪ পিএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৯ পিএম
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় যেন মামলার জোয়ার বইছে। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত শত্রুতা, এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্ব অথবা সাধারণ ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে বেড়েছে এজাহার থেকে ‘নাম কাটা’ বাণিজ্য। এখন মামলা আতঙ্কে ভুগছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
আখাউড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সরকারকে গণবিপ্লবী আখ্যা দিয়ে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলার বাদী পুলিশ। বিস্ফোরক আইনে বাকি ৫টি মামলা দায়ের করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৯৬ জন আর অজ্ঞাতনামা ৫০৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
আখাউড়া উত্তর ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি কাজী ইউসুফ একটি বিস্ফোরক আইনে করা মামলার আসামি। বিএনপি নেতা হয়েও বিএনপির করা মামলার বোঝা মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
কৃষক দল নেতা কাজী ইউসুফ বলেন, আমার ইউপি চেয়ারম্যান মামলাজনিত কারণে অফিসে না আসায় আমি বর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। এই দায়িত্ব পাওয়াটা কিছু লোকের সহ্য না হওয়ায় আমাকে একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে।
একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছাত্তার মিয়া। তিনি ২১ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে তার ফুফার বাড়িতে স্ত্রীসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন। তার পাসপোর্ট ও ভিসার তথ্যই বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে। তাকেও বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি করা হয়েছে।
আবদুস ছাত্তার মিয়া বলেন, ‘ওই সময়ে আমি দেশেই ছিলাম না, তাহলে ওই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত হলাম কী করে?’
আখাউড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শকিল গত ১২ তারিখে থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২৫০ জনকে।
এ মামলার আসামি হীরাপুর গ্রামের রিপন মিয়া বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। যে ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে ঘটনার দিন ও তার আগে পরে ৪-৫ দিন আমি আখাউড়ায় যাইনি।’
ওই গ্রামের প্রবাসী আরিফ হোসেন ২০২২ সাল জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। অক্টোবরের ৯ তারিখ ছুটি কাটাতে দেশে আসার ২০-২২ দিন পর জানতে পারেন বিস্ফোরক আইনে করা একটি মামলায় আসামি তিনি। পরে তড়িঘড়ি সৌদি আরব ফিরে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে মামলার এজাহার থেকে নাম কাটান।
আরিফ হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, বিদেশে বসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেও আমার বিরুদ্ধে কেন মামলায় হয়। বলা যায় দেশের সরকার শুধু বদলেছে, আমাদের আচরণ বদলায়নি।
একটি মামলার বাদী আখাউড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শাকিলের কাছে মামলার বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সামনাসামনি এসে কথা বলেন বলেই সংযোগ কেটে দেন।
আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম ভুঁইয়া বলেন, কোনো নিরীহ বা নির্দোষ মানুষ নয়, আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী মানুষের ক্ষতি করেছে মূলত তারাই আসামি হচ্ছেন। বিএনপি নেতা কাজী ইউসুফের বিষয়ে বলেন, ‘মেম্বার কাজী ইউসুফ উত্তর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি না। কৃষক দলের সভাপতি হলেন অন্য ইউসুফ।’
আখাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, মামলা নেওয়ার সময় যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না। তবে মামলার তদন্তে যারা অপরাধে জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর থানায় আসার আগ পর্যন্ত বাদী-বিবাদী কী করে, তা আমরা জানি না। তবে মামলা বাণিজ্যর মতো এমন কোনো ঘটনা থাকলে প্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ দিতে বলুন। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব।