চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৮ পিএম
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬ পিএম
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় নীলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রিত ২০ পরিবারকে ‘উচ্ছেদ’ করেছেন যুবদল নেতা মমিন ও তার লোকজন। এতে ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়েছে পরিবারগুলো। বর্তমানে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে চরফ্যাশন পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত আবাসন প্রকল্পের নিলীমা আদর্শ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।
অভিযুক্ত মমিন চরফ্যাশন পৌর যুবদলের সদস্য এবং পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসলাম মাস্টারের ছেলে।
জানা যায়, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড আদর্শ গ্রামে ২০১৭ সালে সরকারি অর্থায়নে নিলীমা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ২০টি ঘর বরাদ্দ দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এরপর থেকে দীর্ঘ ৭ বছর এই অসহায় ২০ পরিবার এসব ঘরে বসবাস করে আসছিল।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আশ্রিত ২০ পরিবারকে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হুমকি দিচ্ছিলেন স্থানীয় যুবদলের কতিপয় নেতাকর্মী। তাদের হুমকিতে ঘর ছেড়ে না যাওয়ায় গত রবি ও সোমবার দিবাগত রাতে ভাঙচুর করে লুটে নেওয়া হয় দরজা ও জানালা এবং টিনের চাল।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২০টি ঘরের মধ্যে মাত্র একটি ঘর রয়েছে। বাকি ঘরগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পিয়ারা বেগম নামে একজন আশ্রিত মহিলার ঘরের বেড়া খুলছেন মিস্ত্রিরা। কেউ ঘরের আসবাবপত্রসহ ঘরের চাল ও বেড়া মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে।
ঘটনাস্থলে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে উপস্থিত হন মো. মমিন। পরে তিনি সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও করতে নিষেধ করেন।
পিয়ারা বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপি নেতা মমিন আবাসনে এসে আমাগোরে বলেছেন যে তিনি বিএনপি করায় এই জায়গা শেখ হাসিনা সরকারের লোকজন জোর কইরা দখলে নিছিলো। এহন আমাদের জায়গা ছাইড়া দেও, নাইলে আগুন দিয়া দিমু। পরে আমরা হাত-পা ধরে তাদের থেকে এক দিনের সময় নেই। পরে ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করি। তবে ১৮ নভেম্বর রাতে ঘরের টিনের চাল ছুটাইয়া নেয় মমিনের লোকজন। বর্তমানে আমার ঘরের চালা নেই। থাকার ও খাওয়ার উপায়ও নেই। চৌকির ওপর বসে রাত কাটাতে হচ্ছে।’
আবাসনের বাসিন্দা জেলে বাবুল বলেন, ‘২০১৭ সালে সরকারিভাবে নীলিমা আশ্রয়ণে ঘর পাওয়ার পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলাম। কিন্তু গত রবিবার আশ্রয়ণের ঘরের দরজা-জানালা, টিনের চালা ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাইতটা কোনো রকমে পার করি, দিন হইলে মালামাল নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেই। আমি কি আর আশ্রয় ফিরা পামু না!’
শূন্য ভিটায় দেখা যায়, মিজান-বকুল দম্পতিকে। প্রতিবন্ধী মিজানের বাড়ি উপজেলার ওমরপুর ইউনিয়নে। বকুল বেগম জানান, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। কিন্তু সেখানে জায়গা হচ্ছিল না। চড়া সুদে টাকা নিয়ে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাহীনের কাছ থেকে ঘর নেন বছর দুয়েক আগে। কিন্তু এখন সব হারিয়েছেন। ঘরের চাল-বেড়া সব নিয়ে গেছে। রবিবার রাতটুকু কোনোমতো কাটিয়ে সকালে আশ্রয়ের খোঁজে যান। কিন্তু কোথাও উপায় মেলেনি। বাধ্য হয়ে খালি ভিটায়ই ফিরেছেন। তার গর্ভে সন্তান আছে। স্বামীও প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় কোথায় যাবেন- বুঝে উঠতে পারছেন না।
যুবদল নেতা মো. মমিন বলেন, এই জমি আমাদের পরিবারের সদস্যদের নামে রেকর্ডভুক্ত। সেটি দখল করে আওয়ামী লীগের সময় হতদরিদ্রদের জন্য ঘর দেওয়া হয়। তবে অসহায় ২০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়নি, তারা স্বেচ্ছায় ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া বলেন, আমাদের কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার সংবাদ পেয়ে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখানে গিয়েছিলাম। যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত ওই পরিবারগুলোকে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।