আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম
তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৮ এএম
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নে মধুপুর আশ্যয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে লাগানো এসির আউটডোর ইউনিট। প্রবা ফটো
ভূমিহীন না হয়েও যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ৮ নম্বর হরিহরনগর ইউনিয়নে মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘর বাগিয়েছেন আলতাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, এসব ঘরের তিনটিতে এসিও লাগিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক নেতা ও হরিহরনগর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘরগুলোর দুটি ব্যবহার করছেন তার দুই স্ত্রী। দুটি ব্যবহার করছেন তার শ্যালিকা চায়না বেগম। অপর দুটি ব্যবহার করছেন তার ভাইপোর স্ত্রী শিউলী বেগম।
স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘হরিহরনগর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কর্মরত অবস্থায় আশ্রয়ণ প্রকল্প, নামপত্তন বা নামজারি ও সরকারি জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছেন। তার বাস্তব উদাহরণ আলতাব। তিনি ঘরপ্রতি দুই লাখ টাকা দিয়ে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬টি ঘর বাগিয়ে নিয়েছেন। ছয়টি ঘরের তিনটিতে লাগিয়েছেন এসিও। শুধু তাই নয়, নায়েব শহিদুল ইসলাম হরিহরনগরে থাকাকালীন নামপত্তন বা নামজারিতে লাখ লাখ টাকা কামাই করেছেন। তিনি প্রতিটি নামজারি বাবদ ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা আদায় করেছেন।
বিষয়টি জানতে মনিরামপুর হরিহরনগর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগেই ঘর দিয়েছি। তাই তাকে কয়টি ঘর দেওয়া হয়েছে, সেটা আমার মনে নেই।’
ঘরে এসি লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে গরিব ছিল। এখন ধনী হয়েছে। তাই এসি লাগিয়েছে। ভূমিহীন ব্যক্তি ছাড়া কেউ যদি ঘর পেয়ে থাকেন, তাহলে বর্তমানের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা সহকারী ভূমি কমিশনার সেগুলো বাতিল করতে পারবে। তাই এটি নিয়ে উৎবেগের কোনো কিছু নেই।’
এ বিষয়ে জানতে হরিহরনগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘর বরাদ্দের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নায়েব মিলে ঘর দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। তাই বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তরে অনিয়ম ও এসি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার নিয়াজ মাখদুম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করার আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজখবর নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এসি লাগানোর বিষয়ে জানতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সে বিষয় আলোচনা চলছে। এরপরই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না এ বিষয়ে বলেন, ঘর দখলের বিষয়ে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘর দখলের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর থেকে পলাতক রয়েছেন আলতাব হোসেন। বিভিন্নভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।