খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৫ পিএম
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৭ পিএম
২০১৩-১৪ সালে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি হয়েছেন সোয়েব আখতার। ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ২২ বছর। অর্থাৎ ঘটনার সময়ে সোয়েব আখতারের বয়স ছিল ১১-১২ বছর।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় সোয়েবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। মামলায় সোয়েব আখতারের নাম কীভাবে এসেছে জানেন না মামলার বাদীও।
২৩ অক্টোবর একই উপজেলার ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান স্মৃতি বাদী হয়ে সোয়েব আখতারসহ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া ওই মামলায় অজ্ঞাত আরও ৩০০-৩৫০ জনকে আসামি করা হয়।
সোয়েব আখতারের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সোয়েব আখতার ও তার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। শিশু বয়সে কীভাবে একজন ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির মামলার আসামি হতে পারে সেই প্রশ্নও রাখেন তারা। একই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী রাশেদুজ্জামান স্মৃতির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সোয়েব আখতারের নাম কীভাবে আসছে জানি না।’ তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে সোয়েব প্রকাশ্যে ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের স্বীকার হয়েও এত দিন আওয়ামী লীগের অত্যাচারে আইনের দ্বারস্থ হতে পারিনি। ৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে থানায় মামলা করেছি।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর এই মামলার আসামিরা ব্যবসায়ী ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা রাশেদুজ্জামান স্মৃতির কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জোরপূর্বক তিন লাখ টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে বাকি দুই লাখ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে।
একই মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন উপজেলার পাকেরহাটস্থ উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে এবং এই মামলার বাদী রাশেদুজ্জামান স্মৃতিকে শারীরিক নির্যাতন করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এই মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ সরকার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এরশাদ জামান, গোয়ালডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ডাবলু শাহ, হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোনায়েম খান, আলোকঝাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খগেশ্বর রায়, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক সুশান্ত মহন্ত, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাওফিক আহমেদ শামীম, আবু হেনাসহ আরও অনেকে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজমুল হক বলেন, লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। এই মামলার নামীয় আসামি একজনকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।