মো. জাকির হোসেন, বুড়িচং (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:১৩ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:১৮ পিএম
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজারের পাশে মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা গত শুক্র ও শনিবার উচ্ছেদ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রবা ফটো
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজারের পাশে মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত শুক্রবার ও শনিবার (৯ নভেম্বর) জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কমিশনার মো. মাঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে পাঁচ শতাধিক অস্থায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে পরিবার নিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কয়েক হাজার কর্মচারীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
জানা গেছে, দেশের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে নিমসার একটি বহুল পরিচিত বাজারের নাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার স্কুল-কলেজ ঘেঁষে গত শতকের আশির দশকে গড়ে ওঠে বাজারটি। ধীরে ধীরে এর ব্যস্ততার পাশাপাশি দোকানপাটের পরিধি বাড়তে থাকে। সরকার নির্ধারিত ও ব্যক্তিগত জায়গায় বাজারের অস্তিত্ব থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথের জায়গায় অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে সেগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম নিয়ে ভাড়া দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অভিযোগÑ প্রভাবশালী লোকজন দোকানিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাস শেষে ভাড়া নিলেও উচ্ছেদ অভিযানের খবরে কেউ এগিয়ে আসেনি। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী।
নিমসার বাজারটি রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততা বাড়ে। আবার দিনের আলো যত বাড়ে ব্যস্ততা তত কমে। প্রতিদিন এ বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শাকসবজি, ফল-মূল ছাড়াও নিত্যপণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন প্রান্তিক কৃষক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। স্থানীয় বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন থেকে বাজারের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ দেওয়া হলেও তার পরিসর খুব ছোট। এ অবস্থায় কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা ছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্র সড়কদ্বীপ ও মহাসড়কের দক্ষিণের নিমসার-বরুড়া সড়কের পাশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় অনুমতি ছাড়াই শত শত অস্থায়ী দোকারঘর নির্মাণ করেন। আর সেগুলো সড়কের পাশে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আগ্রহ করে ভাড়া নেন। এ সময় তাদের যাচাই করার সুযোগও থাকে না কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায়। এ সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালীরা অবস্থানভেদে প্রতিটি ছোট-বড় দোকান থেকে ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা অগ্রিম নেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে এসব দোকান থেকে ৩ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়া নেন। ব্যবসায়ীরা এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে কেউ আড়ত দেন, যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শাকসবজি কিনে স্তূপ করে রাখেন। পরে স্থানীয় ও আশপাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার এসে মালামাল কিনে নিয়ে যান। এসব ব্যবসায়ীর অধিকাংশই ঋণের টাকায় ব্যবসা করেন দাবি করে তারা বলেন, মাস শেষে ঘরভাড়া, দোকানের কর্মচারীদের বেতন, নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে যেখানে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘোষণায় দোকান স্থানান্তর করতে গিয়ে ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় দোকান, অন্যদিকে মূল বেচাকেনার সময় ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ইয়াসিন, সাখাওয়াৎ, মোসলেম, খোরশেদ, ইউনুস, দেলোয়ার নামে একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, বিগত সময়ে বাজার উচ্ছেদ করতে প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঘোষণা দেওয়া হতো। কিন্তু এবারের স্বল্প সময়ের নোটিসে দোকানিরা হতাশ। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। অন্যদিকে ভাসমান দোকান দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রভাবশালীরা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। তাদের কেউ আশ্বস্ত করছেন আবারও ঘর নির্মাণ করে দেবেন। এজন্য কিছুদিন অপেক্ষার কথা বলছেন দোকানিদের।
তবে সড়ক ও জনপথ থেকে বলা হয়েছে, আবারও দোকানপাট নির্মাণ করলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশে নিমসার বাজারকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে সড়ক বিভাগ কিংবা প্রশাসন কারও কোনো অনুমতি নেই। এ ছাড়া সড়ক বিভাজক ব্যবহার করেও ব্যবসা করছেন অনেকে। এ কারণে রাত ও ভোরে মহাসড়কে যানজট তৈরি হয়। মহাসড়কে যান চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার জন্য এই অভিযান। আবারও দোকানপাট নির্মাণ করলে অভিযান চালানো হবে।