গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৪ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৩ পিএম
বকেয়া বেতনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রায় ৩৪ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে মহাসড়কে টঙ্গী থেকে মাওনা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা।
গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা গত শনিবার সকাল ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। রবিবার (১০ নভেম্বর) রাত ৮টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত শনিবার থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি পর্যায়ক্রমে শ্রমিকরা ভাগ করে অবস্থান করছেন। শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিলেও উৎসুক জনতা ও সাধারণ মানুষের কারণে তাদের আলাদা করা কঠিন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছে। শ্রমিকদের অবরোধের জায়গার উভয় পাশে দীর্ঘ যানবাহনের সারি তৈরি হয়েছে। এসব যানবাহনের অধিকাংশই গত শনিবার থেকে আটকা। আটকে পড়া পণ্যবাহী যানবাহনের মধ্যে পচনশীল পণ্যও রয়েছে। যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করায় যানবাহনগুলো যাত্রীশূন্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পুলিশ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় অবস্থিত টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের গত তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে। শ্রমিকেরা বেতন দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। গত ২৮ অক্টোবর শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে। তখন পুলিশ জানায়, নভেম্বরের ৩ তারিখ বেতন পরিশোধ করা হবে। সেই দিন শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ৫ নভেম্বর আবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিলে তারা ফিরে যান। তবে মাসের ৯ তারিখ হয়ে গেলেও শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না। কারখানাও বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ। এসব কারণে গত শনিবার সকাল থেকে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা বলছেন, আমরা বেতন পাই এটা আমাদের নায্য দাবি। শনিবার থেকে আমরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছি। বেতন না নিয়ে বাসায় ফিরব না। আমাদের ঘরভাড়া বাকি, দোকানে বাকি। বেতন ছাড়া চলতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না আমাদের এ দাবিতে। মালিক কোথায় রয়েছে এটা আমাদের দেখার বিষয় না, আমাদের বেতন দরকার।
শ্রমিকনেতা আরমান হোসাইন বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। তারা বলেছেন, তিন মাস ধৈর্য ধরেছি আর না। আমাদের কথা হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ রাখায় যে ভোগান্তি হচ্ছে এটি দ্রুত সমাধান করা। আশুলিয়া আর গাজীপুর মিলে ৮-১০টা কারখানায় মূলত ঝামেলা দেখছি। তাদের পাওনাও খুব বেশি না। প্রয়োজনে ওইসব মালিক কিছু সম্পদ বিক্রি করে হলেও পাওনা পরিশোধ করুক।’
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, ‘আমরা শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের আমাদের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, আমাদের শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সকলে মিলেই শ্রমিকদের বলেছি রাস্তাটা ছেড়ে দিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা শুনছে না। সেনাবাহিনীর আশ্বাসের পরও তারা মানছে না। ঢাকা-ময়মনসিংহমুখী যে মহাসড়ক আছে এখানে প্রচুর লোকের যাতায়াত, আমরা তাদের আপাতত বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে বলেছি।’