বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৫১ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:২৪ পিএম
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরে একটি বাড়িতে দিনদুপুরে ডাকাতি করতে এসে উম্মে সালমা (৫০) নামে এক নারীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয় ডাকাত দল।
রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে
বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক সংলগ্ন ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’-এর তৃতীয় তলায় নৃশংস ওই ঘটনা ঘটে। খবর
পেয়ে পুলিশ সাড়ে ৩টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান
হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত উম্মে সালমা (৫০) দুপচাঁচিয়া ডিএস ফাজিল মাদ্রাসার
উপাধ্যক্ষ আজিজার রহমানের স্ত্রী। মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজার রহমান দুপচাঁচিয়া উপজেলা
মসজিদের খতিব। এ ছাড়াও তিনি ‘আজিজিয়া হজ কাফেলা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।
হত্যাকাণ্ডের পর ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের ভেতরে কাপড়-চোপড়
এলোমেলো এবং মেঝেতে একটি কুড়াল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলমারি
কাটার চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কুড়াল দিয়ে আলমারি কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে
দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী শিক্ষক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বাড়িতে
ডাকাতদের প্রবেশ এবং তার স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ফ্রিজে রাখার মতো নৃশংস ঘটনায় এলাকায়
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
দুপচাঁচিয়ার হাটসাজাপুর বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঈন খান জানান,
মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের ৩ সন্তান। বড় ছেলে এবং মেয়ে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে
সাদ বিন আজিজার রহমান বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। সাদ ডিএস ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্র।
আজিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে
বের হই। মাদ্রাসায় পৌঁছার পর ১০টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি।
ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজার বলেন, দুপুর ২টার পর বাড়িতে
গিয়ে প্রধান ফটকে তালা দেখতে পাই। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর ঘরের
সবকিছু এলোমেলো দেখি। ডিপ ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে সেটিকে ভালোভাবে লাগানো হয়নি বলে মনে
হয়। এরপর সেটি খোলার পর তার ভেতরে মায়ের হাত বাঁধা লাশ দেখতে পাই।
বিকল্প চাবি দিয়ে প্রধান ফটকের তালা খোলা প্রসঙ্গে এক
প্রশ্নের জবাবে সাদ বিন আজিজার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মা অনেক সময় বাইরে গেলে তালা দিয়ে
যান। তবে তার ফিরে আসা পর্যন্ত যাতে অপেক্ষা করতে না হয় সেজন্য একটি করে বিকল্প চাবি
তাদের দেওয়া হয়। সেই বিকল্প চাবি দিয়েই আমি তালা খুলেছি।’
নিহত উম্মে সালমার স্বামী আজিজার রহমানের ধারণা সকাল
১০টার পর থেকে দুপুর ১টার মধ্যেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
ডাকাতরা কোনো টাকাপয়সা বা মালামাল লুট করেছে কি নাÑ এমন
প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্টিলের আলমারি কুড়াল দিয়ে কাটার চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে সেটা পারেনি। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে টাকাপয়সা বা স্বর্ণালংকার নিতে পারেনি।’
মাদ্রাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের ৪ তলা বাড়ির প্রথম তলার
বাসিন্দা মাসকুরুর রহমান এবং সাইদুল হক জানান, ঘটনার সময় তারা বাড়িতে ছিলেন না। অন্য
প্রতিবেশীরা বলছেন তারা কোনো চিৎকার বা কোনো শব্দ শোনেননি। দুপচাঁচিয়া নাগরিক কমিটির
সভাপতি আব্দুল বাছেদ বলেন, দিনে-দুপুরে বাড়িতে ঢুকে এভাবে একজন নারীকে হত্যা এবং এরপর
তার লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ঘটনায় আমরা রীতিমতো শঙ্কিত। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার
এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
পুলিশের দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ জানান, ডিপ ফ্রিজের মধ্যে উম্মে সালমার লাশ হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। তবে গলায় কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য আমরা লাশটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে, দুপুর ১টার দিকে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তবে বাড়ি থেকে টাকাপয়সা বা স্বর্ণালংকার খোয়া যায়নি।