গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৮ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৬ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক রাঘববোয়াল দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও গাজীপুরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে শহরের রাজবাড়ির ঢাল এলাকার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত একটি সরকারি পুকুরের দুইপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান উচ্ছেদের মৌখিক নোটিসকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসক নাফিস আরেফিনের উদ্যোগে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা একটি বিশালাকৃতির সরকারি পুকুর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করা হয়। কার্যক্রম চলাকালে পুকুরের উত্তর ও পূর্ব পাশের কোনায় গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান এবং সেসব দোকান থেকে পুকুরে আবর্জনা ফেলার বিষয়টি দৃষ্টগোচর হয় উপস্থিত অতিথিদের। ওই সময়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কায়সার খসরু, গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অভ্র জোতি বড়াল, গাজীপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুকসানা খাইরুন্নেসাসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পুকুর পরিষ্কারের কাজ চলাকালে উপস্থিত জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পুকুরের পাড়ে ওই দোকানগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিতে যান।
এ সময় তারা এ দোকানের ভাড়া কে নেয়, মালিক কে- জানতে চাইলে কয়েকজন দোকানি বলেন, ‘তারা এই দোকানগুলো অগ্রিম জামানত দিয়ে ভাড়া নিয়েছেন। আর এসব দোকানের ভাড়া নেন স্থানীয় আইবুবুর রহমান ও জামাল উদ্দিন গং।’
এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কয়েকদিনের মধ্যে দোকানের মালামাল সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। জানানো হয় পুকুর পরিষ্কারের পর নগরের সৌন্দর্য বর্ধনে পুকুরের চারপাশ অবৈধ দখলমুক্ত করাতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ওই পুকুরের পূর্বপাড়ে, সদর হাসপাতাল রোডের পশ্চিম পাশে ও পুকুরের উত্তর পাড়ে জয়দেবপুর-রাজবাড়ি সড়কের দক্ষিণ পাশে সরকারি জায়গা দখল করে বেশকিছু দোকানপাট গড়ে উঠেছে। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী দোকানপাটগুলো অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। এসব দোকান উচ্ছেদে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল সচেতন মহল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতারা এসব দখলে জড়িত থাকায় কোনো জেলা প্রশাসক উচ্ছেদে সাহস পাননি।
জানা গেছে, এসব দোকান থেকে ভাড়া উত্তোলনে জড়িত জামাল উদ্দিন। তিনি গাজীপুর ক্রীড়া সংস্থার স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তিনি ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ভাঙিয়ে মহানগরীর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামের আশপাশে বেশকিছু দোকানপাট ভাড়া দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। অপরজন আইয়ুবুর রহমান। তিনি গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাসুদ রানা এরশাদের ভাই।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অনেক নেতাকর্মী, এমপি, মন্ত্রীর মতো উল্লেখিতরাও আত্মগোপনে দেশে অথবা বিদেশে চলে গেছেন। ৫ আগস্টের পর ওই দুজনকেও এলাকায় দেখা না গেলেও এখনও তাদের নামে অবৈধ দোকানের ভাড়া উত্তোলন করা হয়। শুধু এ দোকানগুলোই নয়, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টের অন্তত ১০টি সিএনজি স্ট্যান্ডে এখনও তাদের নামেই চাঁদাবাজি চলছে।
গাজীপুর বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, ‘পুকুর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের সময় আমিও সেখানে ছিলাম। অবৈধ দখলদারদের বক্তব্য শুনেছি। পুকুরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় অবস্থিত। এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ এর চারপাশের দখল উচ্ছেদ করে সেখানে হাঁটার পথ নির্মাণ করা হলে স্থানীয় জনসাধারণের অনেক উপকারে আসবে।’
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, পুকুরের দুইপাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা জনস্বার্থে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি ও নগরবাসীর চলাচলের সুবিধার জন্য এটি এখন সময়ের দাবি।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনি বলেন, শেখ হাসিনা পালালেও তার সময়ের প্রথা যেন এখনও রয়ে গেছে। চিহ্নিত চাঁদাবাজিদের গ্রেপ্তার করে সরকারি সব জায়গা দখলমুক্ত করা উচিত।