অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫২ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৪ পিএম
পাহাড়ি-বাঙালিদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র কাপ্তাই জেটিঘাট। যেখানে প্রতি সপ্তাহ শনিবার ভোরে হাট বসে চলে বিকাল পর্যন্ত। কাপ্তাই উপজেলা ছাড়াও শত শত মাইল দূর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এই হাটে ছুটে আসেন। অনেকে হাটের আগের দিন কাপ্তাই চলে আসেন। থাকেন স্থানীয় কটেজ ও হোটেলে। তবে কাপ্তাই উপজেলা ছাড়াও সদুর বিলাইছড়ি, জুড়াছড়ি, রাঙামাটির বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌ-যোগে কাপ্তাই হ্রদের মাধ্যমে তরতাজা শাক-সবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে এখানে ছুটে আসেন মানুষ।
শনিবার (৯ নভেম্বর) কাপ্তাইয়ের সাপ্তাহিক হাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে আসতে থাকা ক্রেতা-বিক্রেতার আগমণে মুখরিত কাপ্তাই জেটিঘাট বাজার। ঠিক ভোরের আলো ফুটতেই হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে ভরপুর হয় এই হাট। যেখানে পাহাড়ি ও বাঙালি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয় এই হাট। হাটে হরেক প্রকারের শাক-সবজি, ফলমূল ছাড়াও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুর দেখা মেলে এখানে। কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে, পাহাড়ি ক্রেতারা বাঙালিদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কিনছে আবার বাঙালি ক্রেতারা পাহাড়ি বিক্রেতাদের কাছে পণ্য ক্রয় করছে। এ যেন পাহাড়ি বাঙালির সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন।
জেটিঘাটের সাপ্তাহিক এই হাটে অধিকাংশ পণ্য আসে কাপ্তাই হ্রদে নৌ-যোগে। তাই দূর-দুরান্ত থেকে আসা শত শত বোট বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ঘাটে ভিড়ে। অনেক সময় বোটেই অধিকাংশ মালামাল কেনা-বেচা হয়ে যায়। সেখান থেকে পণ্য কিনে পাইকারি ক্রেতারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করে থাকে। পাশাপাশি কাপ্তাই সাপ্তাহিক হাটে ইজারার মাধ্যমে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে।
কাপ্তাইয়ের হরিণছড়া, বারুদগোলা, বিলাইছড়ি ফারুয়াসহ দূর থেকে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, সাপ্তাহিক এই হাটে বাগানের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকেন। বহু বছর ধরে তারা পণ্য নিয়ে এখানে আসেন। পণ্য বিক্রি করে কমবেশি সবাই লাভবান হয়। ঐতিহ্যবাহী এই হাটে পণ্য বিক্রি করে অনেকের সংসার চলে। তাই বোটে করে খরচ বেশি হলে সাপ্তাহিক এই হাটে ছুটে আসে মানুষ।
এদিকে সুদূর চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাপ্তাই জেটিঘাঠে পণ্য ক্রয় করতে আসা কয়েকজন পাইকার ক্রেতা জানান, কাপ্তাইয়ের এই হাটে একদিন আগেই অনেকে চলে আসেন। আবার অনেকে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে এই হাটে আসেন। এখানে কম দামে তরতাজা তরকারি, ফলমূল পাওয়া যায়। সেকারণেই দূর থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন। আর এই কাপ্তাই জেটিঘাট বাজারের পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাহাড়ে উৎপাদিত এসব ফসল শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
কাপ্তাই জেটিঘাট সাপ্তাহিক হাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতি সপ্তাহে এখানে লাখ লাখ টাকার পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। কাপ্তাই উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী হাট বসে এখানে। যেখানে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। তাছাড়া পাহাড়ি-বাঙালি ক্রেতা বিক্রেতার এক মিলন মেলায় পরিণত হয় এই হাট। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয় এই হাটে।