বাজারদর
শেখ সোহেল, বাগেরহাট
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৩ পিএম
এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা। শুক্রবার বাগেরহাট শহরের কেবি বাজার থেকে তোলা। প্রবা ফটো
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এর দাম। সরবরাহ কম থাকায় দামও অনেক বেশি। আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। দাম বেশি থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় দাম বেশি।
শুক্রবার বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ১ হাজার, ৩-৪টিতে কেজির মাছ ৭০০-৮০০ টাকা এবং ৫-৬টিতে কেজির মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে।
ইলিশের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে থাকা অন্য মাছের ওপরও। অন্যান্য মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম কমেনি। বরং ভেটকি, রুই, কাতলা, চিংড়ি ও ট্যাংরা মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ভেটকি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে; রুই, কাতলা, মৃগেল, বিভিন্ন কার্পজাতীয় মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। হরিণা, চাকা ও চামি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে পাঙাশ ও তেলাপিয়া আগের দাম অর্থাৎ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য সব পণ্যের মতো মাছের দাম নাগালের বাইরে থাকায় কেটে অল্প অল্প করে ভোক্তার সামর্থ্যমাফিক মাছ বিক্রির দাবি জানিয়েছেন সচেতন ভোক্তারা।
হাফিজুর রহমান নামের এক চাকরিজীবী বলেন, এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশ ভালো বেতনে চাকরি করি। তার পরও পছন্দের মাছ ক্রয়ের আগে অনেক চিন্তা করতে হয়। স্বল্প আয়ের মানুষ তো ইলিশ ক্রয়ের কথা চিন্তাও করেন না। এজন্য ইলিশসহ বেশি দামের বড় মাছ কেটে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করা হয়, তাহলে হয়তো অনেকেই এই মাছের স্বাদ নিতে পারত।
সোহান শেখ নামের এক ক্রেতা বলেন, অবরোধ শেষে ইলিশ কিনতে আসছিলাম। কিন্তু দাম অনেক, তাই রুই মাছ কিনলাম। আর কিছু ছোট ইলিশ কিনেছি। যে অবস্থা বেশিরভাগ মানুষ ইলিশ খেতে পারবে না।
সদরের বাসিন্দা শাহাদত হোসেন বলেন, একসময় মাছের রাজা হিসেবে ইলিশ মাছ গণ্য হয়ে থাকলেও আজ দামের কারণে সেটি এখন রাজাদের মাছে পরিণত হয়েছে।
হাসানুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর আগেও ভরা বর্ষায় ইলিশ জোড়া অথবা হালি হিসেবে বাজারে বিক্রি হতো। দেশের কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ টাকায় জোড়া ইলিশ কেনা যেত। প্রথম দিকে নৌকা ও পরে ট্রলারবোঝাই করে সাগর-নদী থেকে জেলেরা ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরতেন। এখন এসব গল্পের মতো, যেন সবই স্মৃতি।
বাগেরহাট মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল সালাম বলেন, ইলিশের দাম আগের তুলনায় বেশি। ২২ দিনের অবরোধ শেষ হলেও জেলেরা সাগরে মাছ পাচ্ছেন না। সাগরে ডাকাতের প্রভাবও বেড়েছে। এখন বাজারে যে ইলিশ দেখছেন, এগুলো সব পাশের জেলা বরিশালের বেকুটিয়াসহ বিভিন্ন নদীর মাছ। তাই দাম একটু বেশি। সাগরের মাছ আসা শুরু করলে দাম কমবে।
কেবি বাজার মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ আবেদ আলী জানান, অবরোধের ৫ দিন পর গতকালও বাগেরহাটের প্রধান সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কেবি বাজারে কোনো ট্রলার আসেনি; যার কারণে কেবি বাজারে হিমায়িত সাগরের মাছ বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাগরে এবার মাছের পরিমাণ কম। তাই এখনও কোনো নৌকা আসেনি। তাই ইলিশ মাছের বেচাকিনি নেই, আমরা শুধু হিমায়িত মাছ বিক্রি করছি। এ কারণে বাজারে ইলিশের দাম বেশি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ইলিশ মজুদ করে রাখে। বিভিন্ন সময়ে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার করা হয়। ইলিশ মাছ ধরার পর তা আড়তদার এবং খুচরা বিক্রেতাদের হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে পৌঁছয়, ফলে দাম বেড়ে যায়। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং ও ভোক্তা অধিদপ্তর সদস্যসচিব এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে সপ্তাহে দুই দিন অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে জেল-জরিমানা করা হয়। তবে মাছের উৎপাদন বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।