× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাতাশ দিনে হিমালয়ের তিন পর্বত জয়

সঞ্জিত চক্রবর্তী, চাটমোহর (পাবনা)

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩ পিএম

আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৩ পিএম

৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক সামিট শেষে পতাকা হাতে আহসানুজ্জামান তৌকির। ছবি : সংগৃহীত

৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক সামিট শেষে পতাকা হাতে আহসানুজ্জামান তৌকির। ছবি : সংগৃহীত

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মাত্র ২৭ দিনে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বতচূড়া স্পর্শ করলেন পাবনার সন্তান আহ্সানুজ্জামান তৌকির (২৭)। আর সেটি করেছেন কোনো শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই। তার এই অভিযানের নাম ছিল ‘TREE PEAK IN A ROW’, যার পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল রোপ ফোর আউটডোর এডুকেশন। 

চলনবিলের কোলঘেঁষা পাবনার চাটমোহর পৌরসদরে বেড়ে ওঠা আহ্সানুজ্জামান তৌকির পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বতারোহণ তার নেশা। গত তিন বছরে হিমালয়ের পাঁচটি ছয় হাজার মিটারের চূড়ায় উড়িয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা। 

অনলাইনে আলাপকালে তৌকির জানান, বাংলাদেশ থেকে গত ৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। কাঠমান্ডুতে দুই দিনের প্রস্তুতি শেষে চলে যান এভারেস্ট রিজিওনের খুম্বু ভ্যালিতে। সেখানে টানা পাঁচ দিন ট্র্যাকিং শেষে ১১ অক্টোবর পৌঁছান ডিংবোচে গ্রামে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তার আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) অভিযানের কথা থাকলেও টিম লিডার মহিউদ্দিন মাহির তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১২ অক্টোবর লবুচে পিক অভিযানে যান তৌকির। সিদ্ধান্ত নেন কোনো শেরপা ছাড়াই একাই ৬ হাজার ১১৯ মিটারের লবুচে পিকে যাবেন।

১২ অক্টোবর সকালে প্রয়োজনীয় ক্লাইম্বিং ইকুইপমেন্ট নিতে চলে যান ডিংবোচে থেকে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরের চোখুং গ্রামে। সেখান থেকে শুরু করেন ১৩ কিলোমিটার দূরের লবুচে হাই ক্যাম্পের উদ্দেশে যাত্রা। বিকালে লবুচে হাই ক্যাম্প পৌঁছে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে স্থানীয় সময় রাত ২টা ২০ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে পা রাখেন লবুচে ইস্ট পর্বত চূড়ায়, তুলে ধরেন বাংলাদেশের পতাকা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কোনো শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই তিনি এই পর্বত অভিযান শেষ করেন।

তৌকির জানান, এরপর তিনি দলের সঙ্গে চলে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, সেখান থেকে আবার ফিরে আসেন আইল্যান্ড পিক ভিলেজ ক্যাম্প ক্ষ্যাত চোখুং-এ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ১৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেন আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে। দুপুরে বেস ক্যাম্পে পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে টিমমেটদের প্রশিক্ষণ দেন অ্যাসেন্ডিং এবং ডিসেন্ডিং কৌশলের। এরপর রাত ১টা ০৪ মিনিটে সামিট পুশ করেন। প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া, তুষারপাত এবং ফিক্সড রোপে প্রচুর ট্রাফিক পেরিয়ে ১৮ অক্টোবর সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার)-এ পৌঁছান। 

তৌকির আরও জানান, সফল সামিট শেষে তিনি ফিরে আসেন চোখুংয়ে। এরপর নেমে আসেন শেরপা রাজধানী নামচে বাজার হয়ে লুকলা গ্রামে। সেখান থেকে শুরু হয় তার তৃতীয় অভিযানের প্রস্তুতি। খুম্বু ভ্যালি ছেড়ে এবার যাত্রা শুরু করেন হিংকু ভ্যালির দিকে। টানা সাত দিন মাকালু-বারুনসে ফরেস্ট ট্র্যাকিং শেষে ২৭ অক্টোবর হিংকু নদীর উৎপত্তিস্থল পেরিয়ে শেষ গ্রাম খারেতে পৌঁছান। ইকুইপমেন্ট চেক এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ২৯ অক্টোবর মেরা পিক হাই ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হয়ে বিকালে পৌঁছান। রাত ২টা ৮ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং ৩০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে তিনিসহ তার পুরো টিম মেরা পিক (৬৪৬১ মিটার) সামিট করেন এবং মেলে ধরেন লাল-সবুজের পতাকা।

এই অর্জন নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে আহ্সানুজ্জামান তৌকির বলেন, ‘হিমালয়ের সব পর্বত অভিযানই কষ্টসাধ্যের এবং ব্যয়বহুল। প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাইম্বিং শেষে যখন নিজ দেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমেষেই আনন্দে রূপান্তরিত হয়েছে। ধন্যবাদ দিতে চাই রোপ ফোর আউটডোর এডুকেশনকে। যাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই অভিযান সফল হতো না।’

তরুণ এই পর্বতারোহীর এবার সামনের পরিকল্পনা এভারেস্ট নিয়ে। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এই অভিযানগুলো আরও সহজ হবে। স্বপ্নবাজ এই তরুণ এখন নেপালে অবস্থান করছেন আরও একটি প্রশিক্ষণ অভিযানের জন্য। অভিযান শেষে আগামী ১৬ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

তৌকির গত বছরের অক্টোবরে খুম্বু রিজিওনের ৫ হাজার ৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬ হাজার ১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

আহ্সানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতির সন্তান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা