কুলিয়ারচরের হেরিটেজ টোব্যাকো
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯ পিএম
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৫ পিএম
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামের পাশে একটি কারখানায় অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদন করে আসছিল হেরিটেজ টোব্যাকো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কারখানাটির বর্জ্য নর্দমা হয়ে পাশের কালী নদীতে পড়ে পানি মারাত্মক দূষিত করছিল। এলাকার সচেতন মহলের প্রতিবাদের মুখে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। তবে মালকিপক্ষ কারখানাটি পুনরায় চালু করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ১৯টি লাইসেন্স প্রয়োজন। কিন্তু হেরিটেজের ১৯টি লাইসেন্সের কোনোটিই ছিল না। তারা এসবের পরোয়া না করে বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই সিগারেট প্রস্তুত করত। পাশাপাশি সরকারের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদন করত।
সম্প্রতি সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার প্রধান ফটকসহ ভেতরে কোথাও প্রতিষ্ঠানটির নাম লেখা নেই। স্থানীয়রা জানান, কারখানায় উৎপাদনের কারণে দিন দিন স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশে নেতিবাচক প্রভাবসহ জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ে। কারখানার পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশও মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছিল। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ায় মাছসহ জলজপ্রাণী হুমকিতে পড়ে। বিগত সরকারের আমলে অভিযোগ উঠেছিল প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেই কারখানা পরিচালনা করছে হেরিটেজ টোব্যাকো। একপর্যায়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর অবৈধ সিগারেট প্রস্তুত ও বাজারজাত করার অভিযোগে হেরিটেজ টোব্যাকোর ওই কারখানায় অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযানে অবৈধ সিগারেট উৎপাদনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া নকল সন্দেহে ১ লাখ ৬০ হাজার শলাকা সিগারেট, ১১ লাখ ৭২ হাজার অবৈধ ট্যাক্স স্ট্যাম্প ও সাত হাজার কেজি সেলুলোজ অ্যাসিটেট (সিগারেটের ফিল্টারে ব্যবহার করা দ্রব্য) জব্দ করা হয়।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মতিন বলেন, সিগারেট কারখানা উৎপাদনে যেতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, কলকারখানা অধিদপ্তরের অনুমোদনসহ ১৯টি লাইসেন্স লাগে। যেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্সে বলা আছেÑ বয়লার স্থাপন করলে লাইসেন্স বাতিল হবে, সেখানে এসব উপেক্ষা করে নকল সিগারেট উৎপাদন করত প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া কারখানায় রয়েছে অনুমোদনহীন টোব্যাকো প্রসেসিং প্ল্যান্ট। এ ধরনের প্ল্যান্ট তৈরি করতে কলকারখানা কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া কারখানার বর্জ্য যায় পাশের নর্দমায়, যা কালী ও ঘোড়াউত্রা নদীতে মেশে। এতে ওই নদীতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, হেরিটেজ টোব্যাকোর মালিক রফিকুল ইসলাম। তার সঙ্গে চট্টগ্রামের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ব্যবসায়ী আবদুস সবুর লিটনের যোগাযোগ রয়েছে। রফিকুলের কারখানায় বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর মাধ্যমে বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির নকল সিগারেট প্রস্তুত এবং নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো।
এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এই কারখানার মালিক না। আমি এসবের সঙ্গে জড়িতও না।’
কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মতিন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কারখানার মালিকদের কোনো যোগসাজশ নেই। কয়েক দিন আগে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। তখন কিছু অসংগতি ছিল।’ কী কী অসংগতি ছিল জানতে চাইলে সহকারী এ পরিচালক বলেন, ‘ফাইল দেখে বলা যাবে। ওখানে বয়লার স্থাপনের সুযোগ নেই। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হবে।’
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জেলায় নতুন যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’