কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ২০:১৭ পিএম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ২০:২২ পিএম
কক্সবাজারে মহেশখালীতে একটি পরিত্যক্ত বসতঘর থেকে পাচারের জন্য রাখা বিলুপ্তপ্রায় ১২টি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়ায় এ অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার করা হনুমানগুলোর মধ্যে পাঁচটি বাচ্চা এবং সাতটি প্রাপ্তবয়স্ক।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম এনামুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়ায় এ সময় শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের পরিত্যক্ত বসতঘরে বিলুপ্ত প্রজাতির কয়েকটি হনুমান পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ করার খবর পায় বন বিভাগের কর্মীরা। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করে বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বন বিভাগের কর্মীরা সন্দেহজনক বসতঘরটি ঘিরে ফেললে উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় পরিত্যক্ত ঘরে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় বিভিন্ন বয়সি ১২ মুখপোড়া হনুমান পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মহেশখালীর প্রাকৃতিক বন থেকে পাচারকারীরা এসব হনুমান ফাঁদে ফেলে শিকার করেছে।
বনবিভাগের এ রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিত্যক্ত ঘরটির মালিক আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি পরিবার নিয়ে কক্সবাজার শহরে বসবাস করেন। ঘটনাস্থলের পরিত্যক্ত ঘরটির তিনি মালিক হলেও এখন ব্যবহার করেন না। পাচারকারীরা ঘরটিতে লোকজন না থাকা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসব হনুমান মজুদ করেছে।’
উদ্ধার করা হনুমানগুলো বিকালেই শাপলাপুর বনবিটের আওতাধীন প্রাকৃতিক বনে অবমুক্ত করা হয়েছে বলে জানান এসএম এনামুল হক।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও বন্য প্রাণী গবেষক জোহরা মিলানের তথ্য মতে, দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের দেখা মেলে যার মধ্যে একটি হলো মুখপোড়া হনুমানের। বুনো পরিবেশে এদের গড় আয়ু ১৮-৩০ বছর। সাধারণত জুলাইÑ অক্টোবর বা কোনো-কোনো ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এদের প্রজননকাল। স্ত্রী হনুমান ২০০ থেকে ২১২ দিন গর্ভধারণের পর সাধারণত দুয়েকটি বাচ্চা প্রসব করে। হনুমানের এ প্রজাতিটি গাছের কচিপাতা, শাকসবজি ও ফলমূল, ফুল খায়। তবে বসতবাড়ির কাছাকাছি বসবাস করায় মানুষের খাবারেও এরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তার তথ্যমতে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন)-২০১২ অনুযায়ী হনুমানের এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
মহেশখালী উপজেলার সবচেয়ে বেশি পাহাড়ি অঞ্চল শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী। এসব পাহাড়ি এলাকায় এখনও বন্য প্রাণীর বিচরণ হয়েছে। পাহাড় কাটা এবং বন্য প্রাণী নিধনের কারণে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য এখন বিলুপ্ত প্রায়।