আ.লীগ নেতাকে বিএনপি নেতা
নওগাঁ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৯ পিএম
‘বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে, কিন্তু আল্লাহ যে আমার হাতে আপনার মৃত্যু লেখে রাখিছে, এটার কি হবে কন? আপনি মানকার (আরেক বিএনপি নেতা) সঙ্গে যোগাযোগ করে কি করবেন, মানকা বাঁচাতে পারবে? ভাগ মিলতিছে না। আপনি আমার এই নম্বরে বিকাশ, নগদ সব আছে ১ লাখ টাকা পাঠায়ে দ্যান।’
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল আলমকে ফোন করে হুমকি দিয়ে এভাবেই চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় উপজেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন।
তাদের দুজনের মধ্যে কথপোকথনের ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ফাঁস হওয়া ফোন কল রেকর্ড থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বদলগাছী থানায় সাম্প্রতিক দায়ের করা একটি বিস্ফোরক মামলার বাদি বিএনপি নেতা সৌখিন। দায়ের করা তার সেই মামলা থেকে নাম বাদ দিতে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেন সামসুল আলম। তবে সৌখিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। বলেছেন কল রেকর্ডটি অনেক আগের।
সামসুল আলমের বাড়ি বদলগাছী উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। তিনি বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধক্ষ্য। সৌখিনের বাড়ি পাশের চাংলা গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার গোবরচাঁপা হাট নামক স্থানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সেখান থেকে অবিস্ফোরিত ৬টি ককটেল উদ্ধার করে থানা পুলিশ। ককটেল বিস্ফোরণ ও উদ্ধারের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের ৪০ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী বদলগাছী উপজেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন।
মামলার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বাবর আলীসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু মামলার পর থেকেই বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
সাবেক উপজেলা চ্যোরম্যান সামসুল আলম বলেন, ‘বিএনপি নেতা সৌখিন চাঁদা দাবি করে বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন। এর ইমধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজিয়ে তিনি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় আমাকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এরপর মামলা থেকে নাম বাদ দিতে আবারও ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে প্রাণ নাশের হুমকি দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সামসুলের সাথে কোনো কথা হয়নি। ঘটনাটি অনেক আগের। উপজেলা পরিষদ ভেঙ্গে দেওয়ার পর। সেই সময় শোনা যাচ্ছিল, বদলগাছী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক নামে এক বিএনপি নেতাকে সামসুল আলম দুই লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছিল। আমি সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওরঙ্গজেব চৌধুরী মানিক বলেন, ‘সৌখিন মিথ্যা বলেছে। আমার বিরুদ্ধে কেউ চাঁদাবাজির কোনো ঘটনার প্রমান দেখাতে পারবে না। যারা এসব মিথ্যা ও গুজব ছাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসব বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি চৌধুরী টিপু বলেন, ‘সৌখিন ও সামসুলের কল রেকর্ডের ঘটনা অনেক আগের। তবে বিএনপির নাম ভেঙে যে এ ধরণের কাজ করবে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী জানান, ফোন করে চাঁদা দাবির ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি। ৪ নভেম্বর গোবরচাঁপাহাটের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে এজাহার গ্রহণ করা হবে।