সিলেট মহানগর বিএনপি
সিলেট অফিস
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫১ পিএম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৫ পিএম
সিলেট মহানগর বিএনপির ‘সভাপতি’ পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটেনি। গত সোমবার সভাপতির পদ খালি রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এর আগে গত তিন মাসে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে দুবার পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়। এদিকে এত কম সময়ের মধ্যে সভাপতি পদে বারবার পরিবর্তনকে দলের ভেতরে অস্থিরতার প্রকাশ বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। যদিও দলটির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ তা মানতে নারাজ।
দলীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলের ২০ মাস পর গত সোমবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নতুন দায়িত্ব পান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এর আগে গত ১ আগস্ট সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান দলটির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। আগস্টের আগে প্রায় ১৬ মাস সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন নাসিম হোসাইন। তিনি গত বছর মার্চে কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ১০ মার্চ কাউন্সিলরদের ভোটে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন। সভাপতি পদে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ১ হাজার ৬৬টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী পান ৭৬৮টি ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ১ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা সৈয়দ সাফেক মাহবুব ৬৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম নাচন পান ৬২৩ ভোট।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সভাপতি নাসিম হোসাইন আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় কেন্দ্র থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীকে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ১ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বিদেশে অবস্থান করায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ সিদ্দিকীকে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে, দায়িত্ব থেকে সরানো প্রসঙ্গে কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘গত ১ জুলাই পারিবারিক কাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। ফলে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে আগের সব কর্মসূচিতেই মাঠে ছিলাম।’
নাসিম আরও বলেন, আমার পদ এখনও খালি আছে। সভাপতির পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব এখন পর্যন্ত কাউকে দেওয়া হয়নি। আমি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আশা করছি, তারা তা বিবেচনায় নেবেন।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগরীর একাধিক নেতাকর্মী বলেন, মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি নাসিম হোসাইন দলে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তিনি বিদেশে ছিলেন। তাই তার বদলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। তবে স্বল্প সময়ে সভাপতি পদে একাধিকবার পরিবর্তন ভালো লক্ষণ নয়। এতে কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তিনি সাংগঠনিকভাবে সিলেটের দায়িত্বে থাকা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
সিলেটের দায়িত্বে থাকা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এভাবেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, এর পরই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে পুরোপুরি খালি বলা যাবে না, ভারপ্রাপ্ত দিয়েই আমাদের কার্যক্রম চলছে।