হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬ পিএম
টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যানের গাছে মাটির হাঁড়ি বসাচ্ছেন বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামান। সম্প্রতি তোলা।
পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে টাঙ্গাইলে গাছে গাছে বসানো হচ্ছে মাটির হাঁড়ি। ‘পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, এদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের উদ্যোগে টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যান ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও সদর উপজেলার মগড়া চওকড়াকরা গ্রামের বিভিন্ন গাছে দুই শতাধিক মাটির হাঁড়ি বসানো হয়েছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল শহর ও আশপাশের এলাকায় গাছপালা অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি কমছে পাখি। আগের মতো পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না। শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে পৌর উদ্যান, রয়েছে ছোট-বড় বনজ ও ফলদ গাছ। শহর এলাকায় পাখিরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সেজন্য গাছে মাটির হাঁড়ি বসাচ্ছেন তরুণরা। বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামান পাখি রক্ষায় ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেন। হাঁড়িগুলো পৌর উদ্যান ও আশপাশ এলাকা ছাড়াও মগড়া চওড়াকরা গ্রামে গাছের নিরাপদ স্থানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সেই হাঁড়িতে পাখির আনাগোনা শুরু হয়েছে। পাখির নিরাপদ আশ্রয়, পাখি রক্ষা ও তাদের বংশ বৃদ্ধির জন্য হাঁড়িগুলো বসানো হয়েছে। এতে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে পাখিরা বাঁচবে। হাঁড়িগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও নিচের ছিদ্র দিয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া হাঁড়ির দুদিকে বড় দুটি মুখ রাখা হয়েছে। একদিক দিয়ে পাখি ঢুকলে আবার সোজা অন্য মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামান নিজে গাছে উঠে মাটির হাঁড়ি বসাচ্ছেন। পাশাপাশি সংগঠনের অন্য সদস্যরাও গাছে উঠে হাঁড়ি স্থাপন করছেন। টাঙ্গাইল শহরের পৌর উদ্যান ও আশপাশের এলাকাতে প্রথমে ৫০টি মাটির হাঁড়ি বসানো হয়। এরপর সদর উপজেলার মগড়া চওকড়াকরা গ্রামে বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ১৫০টিসহ এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মাটির হাঁড়ি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।
কামরুজ্জামান জানান, এ পর্যন্ত দুই শতাধিক হাঁড়ি বসিয়েছেন। প্রতিটি মাটির হাঁড়িতে খরচ পড়েছে ৩০ টাকা এর সাথে পরিবহন, রঙতুলি, রশিসহ অন্যান্য খরচ মিলে ২০০ হাঁড়িতে ৯ হাজার ৩০০ টাকা খরচ হয়েছে।
এ কার্যক্রমে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পাঠাগারের সদস্য শামীম আল মামুন, মনসুর হেলাল, সাজ্জাদ হোসেন, জাহিদ হাসান, রাকিব হোসেন, শহীদ ইসলাম ও শামীম-শাহীন বিজ্ঞান একাডেমির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
টাঙ্গাইল শহরের বেতকা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, আগে শহরে পাখির কিচিরমিচির শব্দ পাওয়া তে। গাছ কমার সঙ্গে পাখির কলকাকলিও এখন শোনা যায় না। পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। শহর এলাকায় পাখি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
পাখিপ্রেমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে আমাদের শহরে অনেক গাছপালা ছিল, প্রচুর পাখি দেখা যেত। এখন দিন দিন গাছও হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাখিও হারিয়ে যাচ্ছে। কামরুজ্জামান দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। তাকে দেখে অন্যরাও এ কাজে উৎসাহিত হবে।
বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের সদস্য জাহিদ হাসান বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের অপরিহার্য অংশ, তারা প্রকৃতির সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। পাখিদের নিরাপদ আবাস তৈরিতে কাজ করছি আমরা।
উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বই পাঠ কার্যক্রমের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের সুরক্ষায় প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ করে থাকি। এ ছাড়া পাখিদের জন্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ঝড়-বৃষ্টি, শীত থেকে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রজননে পাখিদের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এসব মাটির হাঁড়ি। আমাদের এ উদ্যোগ ধীরে ধীরে পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে। আশা করি, আমাদের এ উদ্যোগ অন্য পাখিপ্রেমিদের উৎসাহিত করবে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চৌরাকররা গ্রামে ২০১০ সালে গড়ে ওঠে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঠাগারটি গ্রামের মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সেলুন, বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশন অণুপাঠাগার স্থাপনসহ শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।