চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৯ এএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০০ এএম
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্য হাতির দল। শুঁড় দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বসতবাড়ি, পা দিয়ে নষ্ট করছে ফসলি জমি। এতে কৃষক যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিয়ে আতঙ্কে আছে মানুষ।
২০১৮ সাল থেকে গত ৭ বছরে হাতির আক্রমণে মারা গেছে অন্তত ১৯ নারী-পুরুষ, আহত হয়েছে আরও শতাধিক। অনেক বাড়িঘরসহ কয়েক কোটি টাকার ফসলি জমি, ধানক্ষেত ও দোকানঘরের ক্ষতি হয়েছে। হাতির অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও থানায় অভিযোগও করেন।
সূত্র জানায়, আনোয়ারার দেয়াং পাহাড়ে বিভিন্ন কারখানার জন্য বন উজাড় করায় খাদ্যের অভাবে হাতিগুলো সন্ধ্যা হলেই বারশত কবিরের দোকান, পশ্চিমচাল, কান্তিরহাট, বটতলী জয়নগর, ছিরাবটতলী, গুচ্ছগ্রাম, জয়নালপাড়া, বৈরাগ ইউনিয়নের দেয়াং বাজার, উত্তর গুয়াপঞ্চক, মধ্যম গুয়াপঞ্চক, আমান উল্লাহপাড়া, নেওয়াজ তালুকদার বাড়ি, খানবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বদলপুরা, বন্দর, বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও গ্রামে এবং কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানের খিলপাড়া, খতিবপাড়া, মাইজপাড়া, দৌলতপুর, দক্ষিণ শাহমীরপুর এলাকায় লোকালয়ে প্রবেশ করে প্রাণহানি ও বাড়িঘর ভাঙচুর চালিয়ে ফসল নষ্ট করে থাকে।
বৈরাগ ইউপি চেয়ারম্যান মো. নোয়াব আলী জানান, বন্য হাতির দলটি খাবারের খোঁজে লোকালয়ে এসে কৃষকের ধান, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নষ্টসহ বসতবাড়ি ভাঙচুর চালায়। এই ইউনিয়নে আটজন মানুষ মারাও গেছে। হাতির ভয়ে এখন রাতের ঘুম চলে গেছে এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কেইপিজেড পাহাড়ে দলছুট বন্য হাতির পাল বিচরণ করছে। দিনের বেলায় হাতির পালটি পাহাড়ের জঙ্গলে এবং কেইপিজেড সড়কে থাকলেও সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে নেমে আসে। হাতির পাল প্রায় সময় পাহাড়সংলগ্ন গ্রামগুলোর কোনো না কোনো এলাকায় তাণ্ডব চালায়।
নূরুল কবির নামে একজন বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যার পর আমরা আতঙ্কে থাকি। এলাকার লোকজন মশাল জ্বালিয়ে পাহারায় বসে। বন বিভাগ চাইলে এই হাতি তাড়ানো সম্ভব। এখানে তো আগে হাতি থাকত না। ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে মানুষ তো কিনতে পাওয়া যাবে না। স্থানীয় দোকানি মো. মনসুর বলেন, আমি আমার দোকানে গতকাল রাতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দ পাই। লোকালয় বন্য হাতি নেমে আসছে। হাতি আমার দোকানের সামনে দিয়ে গেল। হয়তো আমিও মারা যেতাম এই হাতিগুলোর আক্রমণে। আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে অনেক মানুষ মারা গেছে। আমাদের দাবি, বন্য হাতিগুলো আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থেকে অপসারণ করা হোক। আমরা বাঁচা-মরা নিয়ে অনেক আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, খাবার ও পানির খোঁজে হাতিগুলো পাহাড়ের আশপাশে বিচরণ করে। লোকালয় কাছাকাছি হওয়ায় এবং অনেক সময় মানুষ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করায় তারা ভয় পেয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। হাতিগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে দশজন বিশেষজ্ঞের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা দেখছেন আনোয়ারা এবং কর্ণফুলীবাসীকে কীভাবে হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়।