পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৩২ পিএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৯ পিএম
প্রাথমিকের উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল আজাদ রয়েল (গোলচিহ্ন)।
পঞ্চগড়ে একটি রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে সমালোচনার উঠে এসেছেন আজমল আজাদ রয়েল নামে এক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি জেলার বোদা উপজেলার প্রাথমিকের উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন।
একই সঙ্গে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ময়দানদিঘী ও কালিয়াগঞ্জ ক্লাস্টারের দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে। শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা জিয়া পরিষদ ব্যানারে বোদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভাটি। আর সেই অনুষ্ঠানের অতিথির আসনে বসে থাকতে দেখা যায় শিক্ষা কর্মকর্তাকে। সোমবার (৪ নভেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে রাজনৈতিক সভার সেই ছবি।
জানা গেছে, গত শনিবার দুপুরে উপজেলা জিয়া পরিষদ ব্যানারে আয়োজিত হয় একটি মিছিল। এর পর বিদ্যালয় মাঠে ‘শহীদ জিয়া ও আমাদের গনতন্ত্র বিষয়ক’ অনুষ্ঠিত হয় একটি আলোচনা সভা। তবে সেদিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল ও সভার বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যেমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেখে স্থানীয় নেটিজেনদের মাঝে সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলে যোগ দিয়ে আলোচনা সভায় রাজনৈতিক নেতার মত বক্তব্য রাখেন। সরকারি কর্মকর্তাকে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডের উর্ধ্বে থাকা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে জিয়া পরিষদ ব্যানারে অনুষ্টিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শাখা বিএনপি’র সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ।
এ বিষয়ে কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পঞ্চগড় জেলা শাখার প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম ভুট্টু'র সঙ্গে।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি সরকারি চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করেছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক সরাসরি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ায় চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত বা চাকরি থাকার কথা না। চাকরি আইন অনুযায়ী উনাকে সে পদ থেকে অপসারণ করা বাঞ্ছনীয় এবং করতেই হবে, আর এটা প্রশাসনের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে যে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তাতে যদি উনাকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে সে নির্বাচন বিতর্কিত হতে পারে। তাই যারা সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী তারা সরকারের বাইরে কোনো নির্বাচনের বা দলের পক্ষপাতিত্ব হয়ে জনগণের কাছে যেতে পারবে না বা বক্তব্য দিতে পারবেনা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে না। যদি করে, তাহলে সরকারি চাকরির বিধান মতে সে আইন ভঙ্গ করেছে।
সমালোচনার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল আজাদ রয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি জিয়া পরিষদের দলীয় প্রোগ্রাম ছিল না। শিক্ষকরা আমাকে ডেকে ছিল, যার কারণে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সব শিক্ষক গিয়েছিলেন। আমরা চাকরিজীবী, আমাদের রাজনীতি কিসের।’
তবে অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও, মিছিলে থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান মণ্ডল বলেন, সরকারি চাকরিজীবী কোনো রাজনৈতিক প্লাটফর্মে যেতে পারে না। সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনীতি করার কোনো এখতিয়ার নেই। উনি গেছেন কিনা, আমি বিষয়টি জানি না। উনার কাছ থেকে বিষয়টি জানব। একই সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
তবে সরকারি চাকরিজীবীদের দলীয় অনুষ্ঠানে থাকার বিষয়টি নীতিমালায় আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন কোনো নীতিমালা নেই।