রায়পুর
রাকিবুল ইসলাম, (রায়পুর) লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৬ পিএম
উদ্বোধনের ছয় মাস মধ্যেই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে শিশু পার্ক। সম্প্রতি রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরপাতা এলাকায়। প্রবা ফটো
শিশুদের মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে দুই একর জমির ওপর ২০২৩ সালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চরপাতা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাতা এলাকায় শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়। অযত্ন-অবহেলায় পার্কটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নামতেই সেখানে বসে মাদকের আখড়া। নষ্ট হচ্ছে শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন উপকরণ। চুরি হয়ে যাচ্ছে পার্কের মালামাল। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সরকারের প্রায় দুই একর জায়গা দখলমুক্ত করে পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পার্কটি ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় আরও ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ করে পার্কটির কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। পরে পার্কের জায়গা নিয়ে জটিলতা থাকার কারণেও কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকলেও পকেট গেট দিয়ে অনায়াসে প্রবেশ করছে গরু, কুকুর, ছাগল। পার্কের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে মাদক সেবনের উপকরণ। পার্কের দেওয়ালে রোদে কাপড় শুকাতে দিয়েছেন আশপাশের বাসিন্দারা। পার্কের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙা, সেগুলো চুরি হয়ে গেছে বলে জানান কয়েকজন।
স্থানীয়রা জানান, ২০২৩ সালে পার্কটির উদ্বোধনের পর আমরা খুশি হয়েছিলাম। তদারকি না থাকায় উদ্বোধনের ছয় মাস পর পার্কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা গড়ালেই পার্ক মাদকসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়ায় পরিণত হয়। রাতে পার্কের সামনে দিয়ে মাদক কারবারি ও সেবীদের ভয়ে সামনে দিয়ে যেতেও ভয় লাগে। মামলার দোহাই দেখিয়ে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাও আসে না। এই পার্ক আমাদের জন্য বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দাবি পার্কটি সংস্কার করে পুনরায় চালু করা হোক। না হয় পুরাপুরি বন্ধ করে জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। এখানে মাদক ও অনৈতিক কাজ বন্ধ করা হোক।
মো. সাফওয়ান নামে এক শিশু বলে, আমরা পার্কে আসি না, গরু আসে। স্থানীয় মো. রিয়াজ নামে একজন বলেন, রায়পুরে কোনো শিশু পার্ক ছিল না। এটা হওয়ার পর আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। যেই চিন্তাধারা করে শিশু পার্কটি হয়েছে, তার কিছুই নাই এখন। কোনো তদারকি না থাকায় সব জিনিস চুরি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো তদারকি করার কোনো একটা লোক এখানে দেওয়া হয় না। আমাদের দাবি, পার্কটি পুনরায় চালু করা হোক। পাশাপাশি তদারকির জন্য লোকবল নিয়োগ করা হোক।
সুমন নামে আরেকজন বলেন, রাত ১০টার পর পার্কের সামনে দিয়ে যাওয়া যায় না। পার্কের ভেতরে মাদকের আড্ডা ও নারী নিয়ে বিভিন্ন লোকজন আসে। প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। বেশিরভাগ জিনিসপত্র এখন চুরি হয়ে গেছে।
গণমাধ্যমকর্মী আজম খান বলেন, আমরা আশা করেছিলাম এই পার্ক হওয়ার পর রায়পুরবাসী উপকৃত হবে। কিন্তু কী কারণে এই পার্ক বন্ধ হয়ে গেছে জানি না। পার্কের বেশিরভাগ জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে শিশু পার্কের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
চরপাতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুলতান মামুনুর রশীদ বলেন, তত্ত্বাবধানের অভাবে পার্কটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রশাসন থেকে আমাদেরকে তত্ত্বাবধান করতে দেওয়া হয় না। পার্কটি চালু হলে শিশুদের বিনোদনে ভূমিকা রাখত।
পার্কটির জমিসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে মামলা থাকায় কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান।
রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঁঞা বলেন, পার্কের ভেতরে মাদকসেবনসহ অনৈতিক কাজের বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে অভিযান চালিয়ে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।