× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শুঁটকি তৈরির মৌসুম শুরু

ঋণের বোঝা নিয়ে শুঁটকি পল্লীতে যাত্রা

আবুল হাসান, মোংলা ও ইসমাইল হোসেন লিটন, শরণখোলা (বাগেরহাট)

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২০ পিএম

ঋণের বোঝা নিয়ে শুঁটকি পল্লীতে যাত্রা

সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে শুঁটকি তৈরির মৌসুম। আজ সোমবার শুরু হয়ে পাঁচ মাস ধরে চলবে সাগরে মাছ ধরা ও শুঁটকি তৈরির কাজ। ইতোমধ্যে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে সুন্দরবন বিভাগ থেকে পাস পাওয়ার পর মোটা অঙ্কের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুবলার চরসহ পাঁচটি চরে উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার জেলে যাত্রা শুরু করেছেন। 

চট্টগ্রাম, কয়রা, সাতক্ষীরা, বরগুনার পাথরঘাটা, পিরোজপুর, বাগেরহাটের শরণখোলা, রামপাল ও মোংলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেদের গতকাল রবিবার মধ্যরাতে দুবলার চরে রওনা হওয়ার কথা। শুঁটকি আহরণ নিয়ে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই ছোট্ট চরে চলবে জেলেদের মহাব্যস্ততা। দুবলার চর, আলোরকোল, মাঝেরকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালার চরে মৌসুমের পাঁচ মাস চলবে শুঁটকি উৎপাদন।

দুবলার চরকেন্দ্রিক গত বছরের শুঁটকি মৌসুমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার শুঁটকি উৎপাদন বাড়বেÑ এমন প্রত্যাশা বন বিভাগের।

বন বিভাগ জানায়, চরগুলোতে এ বছর জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ৯৮৫টি ঘর, ৫৭টি ডিপো ও ৯৩টি দোকানঘর স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে এই সংখ্যা। শুঁটকি উৎপাদনের লাইসেন্সধারী ১৭ জন বহদ্দার বা মহাজনের অধীনে দুবলার আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালার চরসহ চারটি চরে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি জেলে ও শ্রমিক অবস্থান করবেন।

এদিকে অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়ায় শুঁটকি মৌসুম ঘিরে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত উপকূলের জেলেরা। বঙ্গোপসাগরের পাঁচটি চর নিয়ে সুন্দরবনে সবচেয়ে বড় মৎস্যকেন্দ্র দুবলার শুঁটকি পল্লী। মাথায় বড় ঋণের বোঝা নিয়ে তারা এসব চরে শুঁটকি তৈরির কাজ করবেন।

শুঁটকি আহরণে মোংলার চিলা খাল থেকে রওনা হওয়া সাতক্ষীরার জেলে শুভঙ্কর হালদার ও শরজিৎ বিশ্বাস বলেন, ২০ লাখ টাকা ঋণ করে তারা সমুদ্রে যাচ্ছেন। প্রতি বছর এভাবে ঋণ করে তারা সমুদ্রে যান। কিন্তু সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পান না। বছরের পাঁচ মাস সাগরের লোনাপানি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে মাছ ধরেন। তারপর তা রোদে শুকিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে শুঁটকি তৈরি করেন। তাদের মতো ৯০ শতাংশ জেলেই বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছেন।

অপরদিকে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ায় মৎস্যজীবীদের আয়ের পথে বড় বাধা দূর হলেও রয়েছে সংশয়। শরণখোলার জেলে রহিম জমাদার, মোংলার মোখলেসুর রহমান ও রামপালের সেলিম আকন বলেন, গত চার-পাঁচ বছর দস্যুদের উৎপাত ছিল না। এবার শুনেছি তারা নাকি আবার সাগরে নেমেছে। তবে এখনও দেখিনি। দুবলার চরে গেলে বোঝা যাবে। দস্যুরা সাগরে নামলে তাদের সর্বনাশ হবে। এজন্য কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তা চান তারা।

জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অবৈধ জালে কেউ যেন মাছ ধরতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের কর্মকর্তা কমান্ডার রাশেদুল করিম। 

এ ব্যাপারে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবজ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে আমাদের মায়ের মতো আগলে রেখেছে। কিন্তু আমাদের লোভের বলি হয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এ বন। এ বনকে রক্ষা না করলে আগামীতে এ এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হতে পারে। এজন্য বনের বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম রক্ষায় সরকারি বেসরকারিভাবে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। জেলেরা যাতে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করে শুঁটকির জন্য মৎস্য আহরণ করতে পারেন, সেজন্য বন বিভাগের ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লীর বিশেষ টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মো. খলিলুর রহমান বলেন, শুঁটকি খাত থেকে এ মৌসুমে সাড়ে ৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে গত বছর আয় হয়েছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার থেকেই চরে ঘর তোলা; একই সঙ্গে সাগরে মৎস্য আহরণ শুরু করবেন জেলেরা। ঘর তোলার যাবতীয় মালামাল মহানজন-বহদ্দাররা তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে নিয়ে আসবেন। জেলেদের খাবার পানির সংকট, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা