× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাজার বছর আগের মসজিদ

নিয়ন দুলাল, লালমনিরহাট

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:১৫ পিএম

আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৪০ পিএম

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রামের জামেয়া-আস সাহাবা জামে মসজিদ। প্রবা ফটো

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রামের জামেয়া-আস সাহাবা জামে মসজিদ। প্রবা ফটো

দেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক ‘হারানো মসজিদ’ নামে খ্যাত লালমনিরহাটের ‘জামেয়া-আস সাহাবা জামে মসজিদ’। ধারণা করা হয় ১ হাজার ৪০০ বছর আগে মসজিদটি নির্মিত। যাকে এশিয়া মহাদেশেরও সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস মৌজায় অবস্থিত এই‌ মসজিদ।

১৯৮৬ সালের দিকে লালমনিরহাটে আবিষ্কার হয় এই প্রাচীন মসজিদটি, যা বাংলাদেশে মুসলমানদের আগমনের প্রারম্ভিক ইতিহাসের রাজসাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।  

লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামের একটি জঙ্গলের মধ্যে আবিষ্কার হয় এই মসজিদটি। একসময় স্থানীয় মানুষজন জীবজন্তু ও সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে এ জঙ্গলে যেত না। ১৯৮৩-৮৪ সাল নাগাদ স্থানীয়রা এই জঙ্গলে চাষাবাদের জন্য পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে তারা দেখে জায়গাটি সমতল ভূমি থেকে উঁচু এবং সেখানে রয়েছে সাত-আটটির মতো মাটির উঁচু টিলা। জায়গাটি সমতল করার জন্য খনন শুরু হলে সেখানে প্রাচীনকালের তৈরি প্রচুর ইট পাওয়া যেতে থাকে। সেই ইটগুলোতে ছিল অঙ্কিত কিছু নান্দনিক ফুল। সবাই ভেবে নিয়েছিল পুরোনো কোনো জমিদার কিংবা রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ হতে পারে এটি।

কিন্তু ১৯৮৬ সালে একটি ঘটনা স্থানীয়দের ভাবিয়ে তোলে। আইয়ুব আলী (৫৭) নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি একদিন ইটের স্তূপ থেকে ইট কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে দেখেন কিছু একটা লেখা। লেখা স্পষ্টভাবে দেখার জন্য পানিতে ভালোমতো ধুয়ে দেখতে পান এটি কোনো প্রাচীন শিলালিপি। যাতে লেখা আছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরি সন ৬৯।

পরে স্থানীয় লোকজন বুঝতে পারে, এটি কোনো হারানো মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। সেখানে তারা সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালায়। এরপর আবিষ্কার হয় মসজিদের মেহরাব, মিম্বার ইত্যাদি। ২১ ফুট চওড়া ও লম্বা এই মসজিদের চারটি খুঁটি ছিল, যার দুটিই নষ্ট হয়ে গেছে। পরে লোকজন সেটিতে টিন দিয়ে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ আদায় করা শুরু করে। 

মসজিদটি আবিষ্কৃত হওয়ার ঘটনা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে সেই সময়ের বিভিন্ন মাধ্যমে। পরে প্রাচীনতম এই আলামত দেখে স্থানীয় আলেম সমাজ ও ইসলামিক চিন্তাবিদরা মনে করেন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১ হাজার ৩০০ বছর আগে ৬৯ হিজরিতে। ধারণা করা হয়, হজরত আবু ওয়াক্কাছ (রা.) এই অঞ্চল দিয়েই চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন আর যাতায়াতের সময় এখানেই তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে চীনের বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর ধারে কোয়াংটা শহরে তার নির্মিত মসজিদ ও সমাধি রয়েছে। রোমান ও জার্মান ইতিহাসবিদদের লেখায় আরব ও রোমান বণিকদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বাণিজ্যিক পথ হিসেবে ব্যবহারের কথা লিপিবদ্ধ আছে এবং বেশ কয়েকটি চলমান গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহার হওয়ার প্রমাণও পাওয়া যায়। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিল দাবি করে বলেন, খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পাড় ধরে সিকিম হয়ে চীনের মধ্য দিয়ে আরব ও রোমান বণিকদের বাণিজ্যবহরের যাতায়াতের অনেক প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে। 

এ প্রাচীন মসজিদ পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। নতুন করে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা হজরত আব্বাস (রা.)-এর বংশধর ও ফিলিস্তিন মসজিদে আকসার গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ আলি উমর ইয়াকুব আল-আব্বাসি। সাহাবা মসজিদকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে তোলা হবে আস-সাহাবা কমপ্লেক্স। বর্তমানে প্রতিদিন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বহু পর্যটক এই মসজিদটি দেখতে আসেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা