টাঙ্গাইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ২২:২৯ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৩৮ পিএম
টাঙ্গাইলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পলিথিন ব্যবহার করায় রবিবার দুপুরে সন্তোষ বাজারের ৬ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলাম। প্রবা ফটো
দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টাঙ্গাইলের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তা মানার গরজ নেই। রবিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে পৌর শহরের সন্তোষ বাজারে পলিথিন ব্যবহার করায় ছয় ব্যবসায়ীকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও ৪৪ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। এরপরও জেলার বাজারগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার লক্ষ করা গেছে।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সরকার পলিথিনবিরোধী আইন করে তা বাস্তবায়নে ক্যাম্পেইন করে। সর্বশেষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ নভেম্বর থেকে বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ লক্ষ্যে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
টাঙ্গাইলের পাইকারির বড় বাজার, পার্ক বাজার, সিটি বাজার, ছয়আনী বাজার ও আমিন বাজার ঘুরে জানা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতারা পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য না হওয়ায় হঠাৎ করে নিয়ম মানতে আগ্রহী হচ্ছে না। বিভিন্ন বাজার ও শপিং মলগুলোতে এখনও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহারকারীরা জানায়, পলিথিনের পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ অথবা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেগুলো সব সময় সঙ্গে রাখা যায় না কিংবা কেনার অভ্যাস এখনও গড়ে ওঠেনি। পাটের না হলেও বিকল্প একধরনের ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে তার দাম সাধারণ পলিথিনের তুলনায় কিছুটা বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, শহর এলাকার বর্জ্য পদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে পলিব্যাগ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এ ব্যাগগুলো যখন পোড়ানো হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। যা বায়ুদূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, জেলায় ১০-১২টির বেশি পলিথিন মজুদকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে জেলা প্রশাসন থেকে অভিযান চালানো হলেও তারা মজুদ ও বিক্রি বন্ধ করেনি।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্যতালিকা না থাকায় সন্তোষ বাজারের ছয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন ও আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে; আলিম, দীপক ও রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে। পলিথিনের মজুদ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।