কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৮ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৩ পিএম
টেকনাফ স্থল বন্দরে থাকা শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতংক তৈরি হয়েছে। প্রবা ফটো
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে দেশটির জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। এর জের ধরে রবিবার (৩ নভেম্বর) বিকালে নাফনদীতে দুই দেশের দুইটি চরকে ঘিরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে এসেছে। এতে নিকটবর্তী টেকনাফ স্থল বন্দরে থাকা শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতংক তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কেরুণতলী ও হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কেরুণতলী ও হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার মাঝামাঝি অবস্থিত টেকনাফ স্থল বন্দর। নাফনদীর তীরে অবস্থিত বন্দরের ঠিক ২৫-৩০ ফুট পূর্বে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত জালিয়াদিয়া চর। জালিয়াদিয়া থেকে পূর্ব উত্তরের অনুমানিক ৫০ ফুট দূরে মিয়ানমার নিয়ন্ত্রিত লালদিয়া চর।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ঘণ্টার বেশি সময় জুড়ে এই চর দুইটি ঘিরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। বিষয়টি জানিয়েছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কেরুণতলী এলাকার ইউপি সদস্য নজির আহমদ ও হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী।
এই দুই জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, হঠাৎ করে বিকট শব্দে ভেসে এলে বন্দরে থাকা শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে। এতে আতংকে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিস্ফোরণের শব্দে আতংকে ঘর-বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় এলাকায় বসবাসরত মানুষও।
দুই জনপ্রতিনিধি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরের এখন সংঘাত তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে এই চর দুইটি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠি আরএসও সদস্যের মধ্যে এই সংঘাত চলছে বলে নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। বিকাল সাড়ে ৫টার পর থেকে শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সংঘাতের জেরে মিয়ানমারের লালদিয়া চরে সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। কারা বা কাদের সঙ্গে সংঘাত তা বলা যাচ্ছে না। সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সর্তক রয়েছে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেমর লালদিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাতে গুলি এসে পড়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যালয়, একটি পন্যবাহী ট্রাক ও স্থানীয় এক ব্যক্তির বসত ঘরে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া দেননি।
সীমান্তের ওপারে ৩০ কিলোমিটার জুড়ে রাতভর বিস্ফোরণ
এর আগে সীমান্তের ওপারে শনিবার রাত ৮টা থেকে শুরু হওয়া বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত। বিস্ফোরণের শব্দের সাথে কেঁপে উঠে টেকনাফের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের বসতবাড়িও।
টেকনাফের হ্নীলার ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, টেকনাফ সদরের ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এই তিন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, নাফ নদীর ওপারে টেকনাফ সীমান্ত এলাকাজুড়ে থেমে থেমে ভেসে আসছে মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের আবার নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে । শনিবার রাত ৮টা থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত মংডু শহরের উত্তর ও দক্ষিণে আশেপাশের এলাকায় যুদ্ধ বিমান চক্কর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। বোমার কাপুনিতে টেকনাফের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়ন শাহপরীর দ্বীপের বসতবাড়ি কেঁপে উঠছে। ওইসব এলাকার মানুষজনকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে।
এই তিন চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় নয় মাস ধরে এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত বিমানযোগে বোমা নিক্ষেপ করার বিষয়টি খুব ভয়াবহ ছিল। এমন টানা বিস্ফোরণ আর শোনা যায়নি। এমনকি বিস্ফোরণের শব্দও আগের তুলনায় অনেক ব্যাপক এবং ভয়াবহ।
সীমান্ত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, টেকনাফ, উপজেলার পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপসহ, নাফ নদীর মোহনা সীমান্ত থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বড় বড় বিকট শব্দ।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।