প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৭ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫০ পিএম
মা ইলিশ সংরক্ষণে দেশের নদী ও সাগরে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। রবিবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা নদী ও সাগরে ইলিশ ধরতে নামবেন। এরই মধ্যে জাল, ট্রলার, নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম মেরামত করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। আমাদের প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর…
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জেলেরা মাছ শিকারে নদী ও সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। নগরীর পাহাড়তলীর রাসমণিঘাট এলাকার জেলে মনির বেপারি বলেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় এতদিন বেকার বসে ছিলাম। রবিবার রাতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। এদিন মধ্যরাতেই মাছ শিকারে নামব। ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
নগরীর ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য জেলেরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। শেষ মুহূর্তে এখন জাল, ট্রলার, নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জাম মেরামত করে সব গুছিয়ে নিচ্ছে।
বেতাগী (বরগুনা) : শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিষখালী নদীর তীরবর্তী সদর ইউনিয়নের ঝিলবুনিয়া এলাকায় জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় জেলে মো. শহীদুল ও মো. সোহেলের সঙ্গে। তারা বলেন, নদীতে নামার প্রস্তুতি হিসেবে নৌকায় যার যার মতো করে কাজ করছেন জেলেরা। এবার জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করি। মো. কবির নামে আরেক জেলে বলেন, মাছ ধরতে এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছি আমরা। দিন শেষে গভীর রাতেই নামবেন বিষখালী নদীতে।
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। পৃথক ৩৯ অভিযানে ও ৩ মামলায় ২৭ জেলেকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ৩ লাখ ৮০১ টাকার ১৭৫ লাখ মিটার জাল, ৩৫ কেজি ইলিশ ও ৮টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কেউ মাছ ধরা ট্রলার মেরামত করছে, কেউ আলকাতরা দিচ্ছে, কেউ ধোয়া-মোছার কাজ করছে, কেউ জাল মেরামতে ব্যস্ত। এভাবেই সময় পার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
কলাপাড়ায়ও ২২ দিনের অবরোধ সফল করতে তৎপর ছিল মৎস্য বিভাগসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সাগর ও নদীতে অভিযান চালিয়ে অনেক জেলেকে জরিমানা ও কারাদণ্ড দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। তাই সাগরে গিয়ে জাল ফেললেই জেলেদের জালে ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ বলে দাবি মৎস্য সংশ্লিষ্টদের।
গঙ্গামতী এলাকার জেলে আলী মিয়া বলেন, অবরোধ মেনে আমরা ২২ দিন কর্মহীন সময় পার করেছি। এই নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের মাত্র ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পরিবারে ৫ জন্য সদস্য, এই চাল দিয়ে কিছুই হয়নি। তাই এই ২২ দিনে ৭-৮ হাজার টাকা দেনায় পড়েছি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, রবিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে জেলেরা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে যাত্রা করবে। কলাপাড়ার নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩০৭ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। অবরোধ সফল করতে সাগর ও নদীতে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান পরিচালনা করেছে।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : রামগতি ও কমলনগরের মেঘনাপারের মানুষের একমাত্র পেশা নদীতে মাছ শিকার করা। মাছ ধরতে পারলে তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুবেলা খেতে পারেন। দুই মাস জেলেরা সব ধরনের মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় জেলেরর মাছ ধরতে যাওয়ার শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, কমলনগরে ১৪ হাজার ৯৮ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। আর রামগতিতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৬০ জন। দুই উপজেলায় মোট ৩৪ হাজার ৪৫৮ জন। তারা সবাই মাছ ধরার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে।
তবে প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই ১ নভেম্বর থেকে দেশের সব নদ-নদীতে আট মাস জাটকা (২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের ইলিশ) ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আট মাস জাটকা ধরা, বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। তবে বড় আকারের ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ধরতে কোনো বাধা নেই।