অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২২ পিএম
পাহাড়-প্রকৃতিবেষ্টিত রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন বন্য প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। বন্য হাতি, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর বিচরণ কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। তবে বন্য প্রাণীদের সেখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে গাছ, বাঁশসহ বিভিন্ন বনজসম্পদ দিন দিন উজাড় হয়ে যাওয়ার ফলে বন্য প্রাণীরা লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে।
অপরদিকে বন, জঙ্গলের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা, বসতি। এতে করে খাদ্যসংকটসহ নানাবিধ কারণে বন্য প্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে। বর্তমানে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের লোকালয়ে দিন দিন বাড়ছে বন্য হাতির উপদ্রব। বন্য হাতির পাল লোকালয়ে এসে বিভিন্ন বসতি, স্থাপনার ক্ষতিসাধন করছে। হাতির আক্রমণে আহত, নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে কাপ্তাইয়ে।
হাতি-মানুষের মাঝে এই দ্বন্দ্ব নিরসনে একটি বৃহৎ উদ্যোগ নিয়েছিল বন বিভাগ। কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল সোলার ফেন্সিং। কিন্তু এই ফেন্সিং চালু হওয়ার এক বছর যেতে না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যার ফলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের পরিকল্পনাটিও ভেস্তে যেতে বসেছে।
জানা যায়, রাঙামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই-কর্ণফুলী রেঞ্জের জাতীয় উদ্যান এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণ থেকে মানুষের প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতি মোকাবিলায় সোলার ফেন্সিং স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই রেঞ্জে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সোলার ফেন্সিং প্রকল্প স্থাপন করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও আবাসস্থল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কাপ্তাই রেঞ্জের এলাকায় স্থাপন করা হয়। সোলার ফেন্সিং স্থাপনের পর কয়েক মাস বন্য প্রাণীর লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা ঘটেনি। এ সময় হাতির উপদ্রবও কমেছিল। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতে এসব সোলার ফেন্সিংয়ে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। ফেন্সিং তারের ওপর পাহাড়ধস, গাছের ডাল-পালা পড়ে ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে সোলার ফেন্সিংয়ের ব্যাটারি ও প্যানেল চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সোলার ফেন্সিং পরিচালনার জন্য একজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে অযত্ন, অবহেলায় জর্জরিত অবস্থায় পড়ে আছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সোলার ফেন্সিং।
সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হওয়াতে প্রায় সময় বন্য হাতি লোকালয়ে নেমে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ বিষয়ে কাপ্তাই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন, মোহাম্মদ বাবুসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সোলার ফেন্সিং চালু থাকায় বন্য হাতির উপদ্রব কমেছিল। কিন্তু যখন এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন থেকে আবারও হাতির উপদ্রব বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই কাপ্তাইয়ের লোকালয়ে বন্য হাতি নেমে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে এবং মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে। এতে আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে এলাকার মানুষ।
অনেকে আবার আক্ষেপ করে বলেন, কোটি টাকা ব্যয়ে এই সোলার ফেন্সিং এভাবে অযত্ন-অবহেলায় অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকাতে ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। এক বছরের মধ্যে এত দ্রুত কীভাবে এত দামি জিনিস নষ্ট হয়ে যায় সে বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন রেখেছে। এই খাতে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে কি না, সেটাও প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করে তারা।
এ বিষয়ে বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এএসএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, পাহাড়ধস ও ঝড়-তুফানে গাছের ডাল-পালা পড়ে কিছু কিছু জায়গায় সোলার ফেন্সিংয়ের তার নষ্ট হয়ে গেছে। দুটি সোলার ফেন্সিং ব্যাটারি ও প্যানেল চুরি হওয়ায় কাপ্তাই থানায় জিডি করা হয়েছে। একটি ব্যাটারি সংযুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। এদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দীর্ঘদিন সোলার ফেন্সিং বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু করার জন্য দক্ষিণ বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট তিনি জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
এদিকে পার্বত্য দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই সহকারী বন সংরক্ষক মাসুদ আলম জানান, সোলার ফেন্সিংগুলো সব জায়গায় নষ্ট হয়নি, কিছু কিছু জায়গায় নষ্ট হয়েছে। এটি সংস্কার করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সোলার ফেন্সিং বা সোলার ফেন্স হচ্ছে এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যার দ্বারা বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসতে চেষ্টা করতে চাইলে সোলার ফেন্সিংয়ের হালকা বৈদ্যুতিক শক পেয়ে তারা চলে যাবে। এতে বন্য হাতির প্রাণহানি ঘটবে না। হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এটির ভূমিকা আধুনিক বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে।