শামসুল আলম, পাবনা
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৪ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫১ পিএম
পাবনা সদর উপজেলার পদ্মা নদীতে আবারও চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এতে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কৃষকের শত শত বিঘা কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এর মধ্যেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ভবানীপুরের পদ্মা নদীতে চলছে এই বালু উত্তোলন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাবনার সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ও দোগাছী ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিতেন ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুই দফায় বন্ধ ছিল বালু তোলার কাজ। একপর্যায়ে এর নিয়ন্ত্রণ নেন দোগাছী ইউনিয়নের বিএনপিপন্থি সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলীসহ কয়েক বিএনপি নেতা। দুই সপ্তাহ আগে তারা চর ভবানীপুর পয়েন্টে বালু তোলা শুরু করেন। শতাধিক নৌকায় করে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিনে তোলা ১৫-২০ লাখ টাকার বালু বহন করা হয়, যার বিভিন্ন অংশ চলে যায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন মহলে। চর ভবানীপুরের পাশাপাশি তারা আবারও দোগাছী ও ভাড়ারা এলাকায় বালু তোলার চেষ্টা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চর ভবানীপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারি সারি কলা চাষ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু নদীভাঙনে একের পর এক ভাঙছে কলাক্ষেত। এর মধ্যেই নদীতে চলছে বালু উত্তোলন। অন্তত ২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখা গেছে ওই এলাকায়।
এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় বালু উত্তোলনে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের বিএনপিপন্থি সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী। এ কাজ নির্বিঘ্নে করতে দিনভর বালু তোলা এলাকায় অস্ত্রধারী বাহিনী পাহারায় থাকে। ভাড়াটে অস্ত্রধারী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাটোরের লালপুরের ইঞ্জিনিয়ার কাকন আলী।
মনিরুল মোল্লা, সুমন প্রমাণিক, সিরাজুল ইসলামসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের শত শত বিঘা কলার বাগান নদীতে ধসে যাচ্ছে। আমরা কোথায় যাব? সবাই তো জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না। আমরা সেখানে গিয়ে কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমাদের জমি, বাগান সবই বালু কাটার কারণে আজ নদীতে চলে যাচ্ছে। আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই।
বিশাল এই বালু সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিএনপির প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় নেতার এক আত্মীয় ও জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতাও জড়িত। এ ছাড়া কুষ্টিয়ার একটি সিন্ডিকেটও এর সঙ্গে জড়িত। মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন দোগাছী ইউনিয়নের বিএনপিপন্থি সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হযরত আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এটা পাবনার মধ্যে কাটা হচ্ছে না, এটা কুষ্টিয়ার হরিপুর এলাকা। আমিও গিয়ে দেখেছিলাম। কৃষকরা ভুলভাবে আমার নাম বলতেছে।’
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকিবুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কবে থেকে কারা করছে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এর বেশি কিছু জানি না, আমার কাছে তথ্য নেই।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা জানি না, জানলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। এখন যেহেতু জানলাম, আমরা অভিযান চালাব। অবৈধ বালুমহালের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।’