মহসিন মোল্যা, শ্রীপুর (মাগুরা)
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২০ পিএম
‘বাদশাহ আলমগীর- কুমারে তাঁহার পড়াইতো এক মৌলভী দিল্লীর’...শৈশবে এই কবিতা পড়েননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। বিখ্যাত ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটির লেখক মোগল ঐতিহ্যের কবি কাজী কাদের নওয়াজ।
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান এই কবি ১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতের মুর্শিদাবাদে মাতুলায়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ভারতের বর্ধমানে। পরে তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার অদূরে কুমার নদের তীরবর্তী মুজদিয়া গ্রামে অত্যন্ত নিরিবিলি পরিবেশে বসবাস শুরু করেন। মুজদিয়া গ্রামে বসতভিটায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে কবির পুরোনো বাসভবন ও কবর। অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে কবির বাসভবন ও পারিবারিক কবরস্থান। কবির স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখতে দ্রুত সংস্কারের দাবি এলাকাবাসীর।
কবি কাজী কাদের নওয়াজ ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর মুজদিয়া এসে বসবাস শুরু করেন। এখানেও কিছু দিন তিনি শ্রীপুর মহেশচন্দ্র স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সাহিত্যামোদী পরিবেশে বেড়ে ওঠা কাজী কাদের নওয়াজ কবি হওয়ার স্বপ্ন লালন করেছিলেন আপন হৃদয়ে। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের প্রতি তিনি ছিলেন স্নেহপ্রবণ ও আদর্শপ্রাণ। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ভাষায় তার ছিল অসামান্য পাণ্ডিত্য।
ভারত ও বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে তার অসংখ্য কবিতা ও বিভিন্ন রচনা প্রকাশিত হয়। কবির লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছেÑ মরাল, নীল কুমুদী। ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন ‘দাদুর বৈঠক’ ও ‘দস্যু লাল মোহন’। তার প্রকাশিত উপন্যাস ‘উতলা সন্ধ্যা’ ও ‘দুটি পাখি দুটি তীরে।’
কাদের নওয়াজ সাহিত্যিক জীবনে পেয়েছেন বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার, অভাবিত সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন বিভিন্ন পদক। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
কাজী কাদের নওয়াজের ভ্রাতুষ্পুত্র সাবেক প্রকৌশলী কাজী ওয়াদুদ নওয়াজ বলেন, ‘আমাদের পৈতৃক নিবাস মুজদিয়া হলেও আমরা সেখানে বসবাস করি না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক কবি ছিলেন কাজী কাদের নওয়াজ। তার সাহিত্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে শান্তি নিকেতনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কবির স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
কবি কাজী কাদের নওয়াজ ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কবি কাজী কাদের নওয়াজ স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কবির এই ভবনটি ১৩৭ বছরের পুরোনো। মাগুরা জেলা প্রশাসক গত ৬ অক্টোবর কবির বসতবাড়িটি পর্যটক স্থানে রূপান্তরিত করার জন্য শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি চিঠি দিয়েছেন। আমরা কবির স্মৃতি ধরে রাখতে দ্রুত কবির বসতবাড়ি ও কবরস্থান সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাখী ব্যানার্জী বলেন, ‘কবি কাজী কাদের নওয়াজের বসতবাড়ি ও কবরস্থান প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে। আমরা ইচ্ছে করলেই কাজ করতে পারি না। কোন ধরনের কাজ করা যায়, এই মর্মে জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি চিঠি দিয়েছেন। তবে আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কবির বসতবাড়ি ও কবরস্থান সংস্কারের কাজ শুরু হবে।’