ধর্মীয় অনুভূতি
আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ঘিরে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি)। গত বুধবার রাতে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন চট্টগ্রামের একজন বিএনপি নেতা। ঘটনার পরদিন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক গৌতম তিওয়ারীকে প্রশাসনিক কারণে ক্লোজ করা হয়েছে। তিনি ওই থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গৌতম তিওয়ারীকে প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোনো কর্মকর্তা। তবে সনাতনী জাগরণ মঞ্চের ওই মামলাকে কেন্দ্র করে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, এমনটাই প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে সিএমপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র। বলা হচ্ছে, এই মামলা ঘিরে আরও একাধিক সনাতনী ধর্মাবলম্বী পুলিশ কর্মকর্তাও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে পারেন।
জানা গেছে, বুধবার রাতে মামলার পরই এজাহারের কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি সিএনপির ঊর্ধ্বতন মহল। বলা হচ্ছে, এর নেপথ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের দায় আছে বলে মনে করছে সিএমপি। আবার কেউ কেউ এটাকে দেখছেন পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি তৈরি করে সনাতন ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের শাস্তির মুখে ফেলার একটি আয়োজন হিসেবে।
এ ছাড়া এই মামলায় আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে দাবি তাদের। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু এজাহারের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা নিয়েছে। এটা পুলিশ পারে না। অদৃশ্য কোনো শক্তির প্রভাবে পুলিশ এক্ষেত্রে অতি উৎসাহী ভূমিকা দেখিয়েছে। বিষয়টিও আমরা আদালতে উপস্থাপন করব।’
কোতোয়ালি থানার এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর সনাতন ধর্মাবলম্বী একজন উপপরিদর্শককে তদন্তভার দেওয়া হয়। ওই পরিদর্শক ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় উল্লেখ করে ভার না দেওয়ার অনুরোধ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাকে তদন্তভার দেওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরে মামলার কপিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উচ্চ মহল বেশ প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে। ওই ঘটনার দায়েই পরদিন সেকেন্ড অফিসার গৌতম তিওয়ারীকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। মূলত এজাহার ফাঁস হওয়ার বিষয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তাদের দায়ী মনে করা হচ্ছে। আরও দুজনকে এই বিষয়ে শাস্তির মুখোমুখি করা হবেÑ এমন একটি গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট লঙ্ঘনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা এমন গুরুতর কোনো বিষয় নয়। মামলা হয়েছে। ওই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়েছে। কাজেই দুই আসামি বা তাদের আইনজীবী এমনকি বাদী যে কেউ মামলার কপি পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু এখন এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, কেউ আসলে বুঝতে পারছে না কখন কী করবে আর কোনদিক থেকে কী বিপদ আসবে।’
সিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত অর্ধডজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব আলাপের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। গৌতম তিওয়ারীকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন সিএমপির উপকমিশনার (সদর) এসএম মোস্তাইন হোসেন। কী কারণে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি বিভাগীয় বিষয়। এই বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই।’
শুধু মোস্তাইন হোসেন নন, সিএমপির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। উপপরিদর্শক গৌতম তিওয়ারীর প্রত্যাহার ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘এসব বিষয়ে জানতে এডিসির (জনসংযোগ) সঙ্গে কথা বলুন। সিএমপির কার্যক্রম সম্পর্কে মিডিয়াকে তিনি অবহিত করবেন।’ সিএমপির এডিসি (জনসংযোগ) কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘এই বিষয় সম্পর্কে আমার ঠিক জানা নেই।‘ সিএমপির কমিশনার হাসিব আজিজ ওই সময় কার্যালয়ে ছিলেন না। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া মিলেনি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে মামলাটি করেন চান্দগাঁও থানার মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। তবে বিএনপি বলছে, এই মামলার বিষয়ে দল কিংবা সিনিয়র কোনো নেতার সঙ্গে পরামর্শ করেননি তিনি। এই কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শুক্রবার তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলার পর থেকে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন অব্যাহতিপ্রাপ্ত এই বিএনপি নেতা। এই বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।