× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঝাড়ু বিক্রেতার গরু বেচে টাকা ভাগ করে নিলেন বিএনপির নেতারা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪১ পিএম

আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৫৫ পিএম

ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির। প্রবা ফটো

ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির। প্রবা ফটো

‘রানা আমারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। ইব্রাহিম এবং রমজান আমার স্ত্রীকে গরু বিক্রির জন্য ভয় দেখায়। স্ত্রী গরু বিক্রি করতে না চাইলে তারা বলে, দেখেন শেখ হাসিনাকে নামিয়ে যেভাবে বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, একইভাবে আপনার স্বামীকে জেলে পাঠিয়ে পুরো গ্রামের বিএনপির লোকেরা আপনার বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। পুরো পরিবারকে জেলে যেতে হবে। আপনি কী স্বামীর সঙ্গে জেলে যেতে চান নাকি গরু বিক্রি করবেন? বাধ্য হয়ে স্ত্রী বলেন, ‘গরু বিক্রি করে দেন’। পরে ব্যাপারীকে ডেকে আমার শেষ সম্বল একটি মাত্র গরু ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় রমজান, ইব্রাহিম এবং রানা। ৩০ হাজার টাকা তারা নিয়ে যায়। বাকি ছয় হাজার টাকা আমার স্ত্রীর হাতে দিয়ে যায়।’

কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে ঝাড়– বিক্রেতা ও বন প্রহরী জাহাম্মদ আলী ফকির (৬৫)। সে বন থেকে ছন কুড়িয়ে ঝাড়ু তৈরি করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং আওয়ামীলীগের সমর্থক (ভোটার)। এলাকাবাসী জানায় জাহাম্মদ কখনো সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। ছেলে-মেয়েকে তার বাড়ীতে রাখার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই নেতার নির্দেশে তারা ওই বৃদ্ধের গরু বেচে দেয়।

রবিবার (২৭ অক্টোবর) শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া (তারাকাট) বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তরা হলো কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কাদীর সরকারের ছেলে বাবলু সরকার, তার ভাই কাঠ ব্যবসায়ী কামরুল এবং একই ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিনের ছেলে সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর (২৫), আকবর আলীর ছেলে সহযোগী জহিরুল ইসলাম (২৬), যুগীরছিট গ্রামের সুরুজের ছেলে ইব্রাহিম, রমজান এবং রানা।

ভুক্তভোগী জাহাম্মদ আলী ফকির বলেন, ‘২৬ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরের অটোরিকশায় করে কাওরাইদ ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর থেকে তারকাটা বাজারে যাচ্ছিলেন তেলিহাটী ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের আল-আমীন তার প্রেমিকা। পথে জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগী জহিরুল বারতোপা বাজারে পূর্ব পাশে অটোরিকশা থামিয়ে প্রেমিক যুগলের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। আল-আমীন টাকার জন্য বাবাকে ফোন দিয়ে মোবাইল বন্ধ পায়। রাত আড়াইটার দিকে আল-আমীন তার আত্মীয় আমার পুত্রবধূকে ফোন দিয়ে তাদের উদ্ধার করতে বলেন। আমার পুত্রবধূ বিষয়টি জানালে রাত ৩টার দিকে বারতোপা বাজারে গেলে ১০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। আমার কাছে টাকা নেই জানালে, পরদিন সকালে দেওয়ার কথা বলে ছেড়ে দেয়। ভোরে প্রেমিক যুগলের বিয়ে হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ওই দিন সকালে আল-আমীনকে নিয়ে তার বাবার কাছে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাই। ছেলের বাবা টাকা না দিলে আমি বাড়িতে ফিরে আসি। দুপুরে ওই ১০ হাজার টাকার জন্য আমাকে ফোন দেয় জাহাঙ্গীর। আমার কাছে কোনো টাকা নেই জানালে তারকাটা বাজারে যেতে বলে। কিছুক্ষণ পর ১০-১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে আসে। তাদের সঙ্গে বাজারে গিয়ে দেখি, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাবলু সরকার ও তার ভাই ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য কামরুলসহ শতাধিক লোক জড়ো হয়ে আছেন। আমি কাছে যাওয়া মাত্রই কামরুল চড়-থাপ্পড় দিয়ে সেখানে বসতে বলে। প্রেমিক যুগলকে কেন আমার বাড়িতে রেখেছি, সেজন্য কামরুলের নেতৃত্বে আমাকে মারধর করা হয়। পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে কামরুল। না দিলে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার কথা বলে। বাবলু সরকার লাথি মারে। তাদের সহযোগী ইব্রাহিম বলে এখানে সবাই বিএনপির নেতা। তাদের মানাতে পারবো না। আপনি ৩০ হাজার টাকা দেন। বিষয়টা সমাধান করে দিই। না হলে জেলে পাঠিয়ে দেবে। পরে ইব্রাহিম, রমজান এবং রানা গরুর ব্যাপারীকে ডেকে নিয়ে এসে আমার শেষ সম্বল একটি মাত্র গরু বিক্রি করে দেয়। ছয় হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৩০ হাজার টাকা ভাগ করে নিয়ে যায় তারা।’

জাহাম্মদ আলীর স্ত্রী জামেনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামীকে নির্মমভাবে মারধর করেছে। তারা আমার পালিত গরু বিক্রি করে ছয় হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে গেছে।’

গরুর ক্রেতা ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় তারা আমাকে ডেকে নেয়। আমি বাজারমূল্য হিসেবে গরুটি কিনেছি। এখানে আমার কোনো দোষ নেই, নেতারা বলায় আমি কিনেছি।’

অভিযুক্ত কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি বাবলু সরকার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। জাহাম্মদ আলীকে আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোমেনুল কাদের বলেন, ‘জাহাম্মদ আলী তার বাড়িতে প্রেমিক যুগল রেখে অন্যায় করেছেন। আমাদের ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাবলু সরকার যে কাজ করেছেন, সেটিও অন্যায়। নেতাকর্মীদের চাপে পড়ে তারা ৩৬ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করে নেতাদের ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন।’

কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এমদাদ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘শনিবার দুপুরের দিকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমাকে বলেছেন। রবিবার এ বিষয়ে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করবো। দলের যারা ঘটনায় জড়িত, প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন মণ্ডল বলেন, ‌‘গরু বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা